আজ বাংলাদেশ আবারও নতুন করে স্বাধীন হলো। স্বাধীনতা শব্দটির সঙ্গে আগেই পরিচিত ছিলাম। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতায় পেয়েছিলাম একটি ভূখন্ড তার সঙ্গে সার্বভৌমত্ব। সরকার এবং জনগণ তখনো ছিল কিন্তু কিসের যেন এক অপূর্ণতা ছিল। আজ ২০২৪ সালের স্বাধীনতায় সেই অপ্রতুলাটুকু যেন পূর্ণতা পেল।। সেই অপূর্ণতাটুকু হলো- কিছু দেশপ্রেমিক মেধাবী মুখ। যারা দেশকে ভালোবাসে দেশের লোভে, ক্ষমতার লোভে নয়। দেশের বিপরীতে তাদের কাছে টাকা, অর্থ, বিত্ত মূল্যহীন। যা শুধু কথার কথা নয়, কষ্টিপাথরে পরীক্ষা করে পাওয়া স্বর্ণের মতো খাঁটি। বাবা-স্বামীর খপ্পর থেকে দেশ আজ মুক্ত। এদেশ কারও বাবার বা কারও স্বামীর নয়। এদেশ আঠারো কোটি মানুষের। আঠারো কোটি মানুষের একাগ্রতায় এদেশ এগিয়ে যাবে বহুদূরে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই তো আলো দেখা যাচ্ছে। সুবহে সাদিক প্রসন্ন।
তবে বর্তমানের এ সময়টুকু খুবই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃত সুবহে সাদিক পাওয়ার জন্য এ সময়টুকু কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না।
তাই সুন্দর এক ভোরের জন্য প্রথমত সদ্য প্রয়াত সরকারের তৈরি করা শিক্ষানীতি আবার ঢেলে সাজাতে হবে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে তৈরি এক জঞ্জাল শিক্ষাক্রম বাতিল করে, গণমানুষের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রণয়নকৃত ৯ দফার অন্যতম দফা- দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ষোষণা করে ছাত্র সংসদ দ্রম্নত কার্যকর করে শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ছাত্রনেতা তৈরি হবে ছাত্রদের মধ্য থেকে। যেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না কোনো ধরনের রাজনৈতিক দল। শুধু ছাত্রদের রাজনীতি নয়, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে লাল দল-নীল দল নামে শিক্ষকদের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে সরে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গবেষণাসহ নানা খাতে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় আন্তজার্তিক মানের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি নিয়োগে জ্ঞান প্রজ্ঞাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রভাষক নিয়োগে বর্তমানে কর্মপন্থা বাতিল করে আন্তর্জাতিক নীতি অবলম্বন করতে হবে। শুধু সিজিপিএ দেখে নিয়োগের রীতিকে কবর দিতে হবে। প্রমশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জার্নালের গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যাকে প্রধান্য না দিয়ে প্রবন্ধের গুণগত মানকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপকের বেতন কাঠামো নতুন করে পরিবর্ধন করতে হবে। স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে বিশেষ কমিশন গঠন করে দেশের স্থাপিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গুলোকে আরও উন্নত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখস্ত বিদ্যার ব্যবহার বাদ দিয়ে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। পুঁথিগত বিদ্যার সঙ্গে নৈতিক শিক্ষার প্রসারে নতুন করে ভাবতে হবে। মৌলিক শিক্ষার বিস্তারে স্ব স্ব ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষাকে নতুনভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে যেন সমাজের সর্বস্তরের ছেলেমেয়ে এই শিক্ষা গ্রহণ করে নিজ এবং সমাজের আরও দশজনকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে যার জন্য সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। দেশে মেরিন একাডেমির সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও জনপ্রিয়তা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। তাই মেরিন একাডেমি গুলোকে তার পূর্বের সম্মান ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। মেডিকেল কলেজগুলোর অধ্যক্ষ এবং হাসপাতালগুলোর পরিচালকের নিয়োগে আরও সচেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসির আহমেদের মতো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের জেলা শহরে অবস্থিত সব জিলা স্কুল এবং সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় ভর্তি কার্যক্রমে আবার পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আসতে হবে। স্কুল বলা কলেজে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও সুযোগ প্রদান করতে হবে। শিক্ষকদের অবসরের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি জোর দিয়ে দেখতে হবে। দেশের কোচিং সেন্টারগুলোর জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে যাতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক তাদের দায়িত্বে গাফিলতি করতে না পারে। গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। টোকাইদের শিক্ষা পদ্ধতিতে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। শুধু কোনো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার হাতে দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে সরকারকে তাদের উন্নয়নে বিশেষ নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার জন্য পরিপূর্ণ নীতিমালা তৈরি করতে হবে। শুধু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে টোকাই থেকে গবেষক বানানোর নিমিত্তে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে শিক্ষাকে এক নম্বরে রেখে সব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে শিক্ষা ব্যবস্থা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বমানের হয়ে থাকে। বিশ্বমানের বিষয়গুলো যেমন- পদার্থ, রসায়ন, অর্থনীতি, গণিতসহ অন্যান্য বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্র বাড়াতে হবে যাতে সব শিক্ষার্থী এসব বিষয় পড়তে আগ্রহী হয়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে উপরিউক্ত বিষয়ে নোবেল অর্জনে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। সব নীতিমালায় সরকারের সব পর্যায়ের সমন্বয় রাখতে হবে যাতে সব পরিকল্পনা সুচারুরূভাবে সম্পাদনা করা সম্ভবপর হয়। আর এভাবেই হয়তো অর্জিত হবে আমার আপনার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদশে মেধাবীরা হবে প্রধান নিয়ামক। শিক্ষার মাধ্যমেই আমরা আরোহণ করব উন্নতির উচ্চ শিখরে। সে আশায় বুক বাঁধলাম।
মো. আফসারুল আলম মামুন
প্রভাষক, পদার্থবিজ্ঞান
যশোর ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ
যশোর সেনানিবাস, যশোর