শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্র-জনতার বিজয়

বাদশাহ আব্দুলস্নাহ
  ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ছাত্র-জনতার বিজয়

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যভাবে বিদায় হয়েছে শেখ হাসিনার। এদেশের জনগণের সঙ্গে বেইমানির অবসান হয়েছে। মানুষের ১৫ বছরের ক্ষোভে শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারের মেরুদন্ড ভেঙে গেছে। বাধ্য হয়ে, কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে দেশ থেকে পলায়ন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভু্যত্থান এবং ২০২৪ এর গণঅভু্যত্থানে ছাত্র-জনতার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে বাংলাদেশে নতুনভাবে বিজয় অর্জিত করেছে। এ বিজয় অর্জনের পেছনে রয়েছে মহাসংগ্রামের ইতিহাস। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে উদ্দেশ্য করে রাজপথে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশে ব্যাপকতা লাভ করে। এই অরাজনৈতিক আন্দোলনটিকে উসকে দিয়েছিল শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই সারাদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে ৩০০-এর অধিক মানুষ। যাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ১৯৬৯ সালের গণ-অভু্যত্থানে ৬১ জন মারা গিয়েছিল। তার পাঁচগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে ২০২৪ সালের গণঅভু্যত্থানে। এবারের গণ-অভু্যত্থানে নারী, শিশু, চিকিৎসক, শিক্ষকসব পেশার মানুষের সর্বজনীন উপস্থিতি ছিল। দেশের মানুষের ওপর হিংস্র মনোভাব সৃষ্টি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। দেশে গণতন্ত্রের কোনো পরিবেশ ছিল না। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে নির্মম গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি জামায়াতের ১১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীদের বন্দি করেছিল। যেসব দেশে গণতন্ত্র সুসংহত নয় সেসব দেশে প্রায়ই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। গণতন্ত্র সুসংহত নয়, এমন দেশগুলোতে এ রকম পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। ইন্টারনেটবিহীন অবস্থায় বাংলাদেশ বিশ্বের যোগাযোগব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্নই ছিল। সারাবিশ্বের কোন দেশ কত সময় ধরে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখে, তার হালনাগাদ তথ্য দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা। এ রকমই একটি সংস্থা 'ইন্টারনেট সোসাইটি'। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক এই সংস্থা সাধারণ মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে কাজ করে। বাংলাদেশে ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ক্লাউডফ্লেয়ারের আউটেজ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেট বিভ্রাটের শুরুতে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। ২৫ জুলাই দেশটি জুড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য সরকারের নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। সিরিয়ার পরেই বাংলাদেশ। ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ দেখানোর বিষয়টি উলেস্নখ করে ক্লাউডফ্লেয়ার। সেখানে সরকারের নির্দেশে বন্ধের বিষয়টি বলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছে। দেশের সব প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে সব জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়ম করে ক্ষমতায় গেছে শেখ হাসিনা। একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিল। বিএনপির নেতাকর্মীকে গুম, খুনসহ অন্যায়ভাবে বারংবার জেলে রাখা হয়েছিল। জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছিল। বিএনপির মতো জামায়াতের নেতাকর্মীকেও গুম, খুনসহ অন্যায়ভাবে জেলে রাখা হয়েছিল। শেখ হাসিনা এদেশের মানুষকে জিম্মি করে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে ১৫ বছর। দেশে লাগামহীন দুর্নীতিবাজ তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। কিন্তু শেখ হাসিনা হয়তো ভুলে গিয়েছিল, বাঙালি জাতি কখনো মাথা নোয়াতে জানে না। শেখ হাসিনার নির্মম পরিণতিতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কলঙ্ক রচনা হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নাই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, নব্বইয়ের গণঅভু্যত্থানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শান্তিপ্রিয়ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। কিন্তু সে সময়ও তিনি দেশ থেকে চলে যান নাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনাই রাষ্ট্রপ্রধান থাকা অবস্থায় দেশত্যাগ করেছেন। যেটা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কৃতকর্মের ফল। সর্বোপরি, ছাত্র-জনতার তীব্র তোপের মুখে শেখ হাসিনার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতার বিজয় হয়েছে।

বাদশাহ আব্দুলস্নাহ

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে