গণ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে সামনে রেখে 'তরুণদের দেখানো পথে' বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের এই যাত্রায় উপদেষ্টা হিসেবে তার সঙ্গে থাকছেন আরও ১৬ জন। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শপথ নিয়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার হবে দেশের সবার সরকার।' এছাড়া নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের, সুবিচারের, মানবাধিকারের ও নির্ভয়ে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এই প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে অগ্রগতির ধারায় এমনটি আমরা প্রত্যাশা করি। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানাই আমাদের অভিনন্দন। উলেস্নখ্য, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রম্নতি ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকার কথা এর আগেই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে চীন, স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং পরে গোপনীয়তার শপথ নেন ইউনূস। শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর ১৬ উপদেষ্টার নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ১৩ জন উপদেষ্টা একসঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেন। শপথ নেওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী শপথ বইতে সই করেন সবাই। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে 'রাষ্ট্র পুনর্গঠনের' কাজকেও অগ্রাধিকার দেবে বলে তুলে ধরেন আন্দোলনের মাঠের ছাত্র প্রতিনিধি থেকে উপদেষ্টা হওয়া নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, 'রাষ্ট্রের সংস্কার কাজটি করতে হবে। পুরো বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাতে হবে।' আমরা প্রত্যাশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামগ্রিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেবে এবং যথাযথভাবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।
লক্ষণীয় যে, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ জনের উপদেষ্টা পরিষদ এমন এক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ নিল, যখন দেশে চার দিন ধরে ছিল সরকারহীন। প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, চারিদিকে বিরাজ করছে অরাজক পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুরা হামলা লুটপাটের শিকার হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাড়ছে লাশের সংখ্যা। পুলিশবিহীন দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থী-স্বেচ্ছাসেবকরা। ফলে সব ধরনের সংকট নিরসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করবে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, ছাত্র-জনতার প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।
উলেস্নখ্য যে, ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটার আগে ও পরে সহিংসতা এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে প্রাণ গেছে কয়েকশ' মানুষের; আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অনেকে। ফলে সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, সেই স্বপ্নের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক, সব ধরনের অরাজক পরিস্থিতির অবসান হোক। জীবন হোক স্বাভাবিক এবং মানুষে মানুষের বসবাস হয়ে উঠুক সুন্দর।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে যাত্রা শুরু হলো সেই যাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে যাক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি রোধ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত হোক। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার হবে দেশের সবার সরকার' এটি নিশ্চিত হোক। 'তরুণদের দেখানো পথে' বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে প্রত্যয়ে গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তার যথাযথ বাস্তবায়ন হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।