বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, এটাও স্মর্তব্য যে, দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকটসহ নানা ধরনের অভিযোগও বিদ্যমান। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সংকট, অনিয়ম থাকলে সেবা বিঘ্নিত হবেই। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে- জটিল রোগের চিকিৎসায় রোগীরা হাসপাতালে অপারেশনের জন্য দিন গুনছেন। অনেকে অপারেশনের সিরিয়াল নিয়ে শয্যায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু গত ১৬ জুলাই থেকে বেশিরভাগ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের অপারেশন ছাড়া অন্যসব অপারেশন বন্ধ আছে। আর এর কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, চিকিৎসকরা আসছেন কম। যারা আসছেন তারা সপ্তাহে একদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে আবার চলে যাচ্ছেন। শুধু ইন্টার্ন ও জুনিয়র চিকিৎসকদের ভরসায় চলছে হাসপাতালগুলো।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রায় সব হাসপাতাল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী শূন্য হয়ে পড়ে বলে জানা যায়। গত মঙ্গলবার রাজধানীর বেশিরভাগ হাসপাতালে পরিচালক, সিনিয়র চিকিৎসক, কর্মকর্তারা আসেনি। শুধু আউটডোরে দু-একজন জুনিয়র চিকৎসক চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। আর এমন পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একইসঙ্গে এটাও প্রত্যাশা করি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই সংকট দ্রম্নতই কেটে যাবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিকিৎসাসেবা খাতের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনে যথাযথভাবে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করবে।
উলেস্নখ্য, প্রকাশিত খবরে এমনটিও উঠে এসেছে যে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, হাসপাতালগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ফোন করলেও কাউকে পাচ্ছে না। চিকিৎসক যদি হাসপাতালে না যায় তাহলে চিকিৎসাসেবা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেও তিনি জানিয়েছেন। হাসপাতাল পরিচালকদের নিয়ে জুম (অনলাইন) মিটিং করার বিষয়টিও উলেস্নখ করে বলেছেন, পুরোপরি না হলেও সেবা যেন বন্ধ না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ফলে, এটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সংশ্লিষ্টদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কীভাবে জটিল রোগের চিকিৎসাসহ পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা যায় এবং যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা যায় সেটিকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কেননা, এ কথা বলার দরকার পড়ে না, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হলে তা উদ্বেগজনক। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, একজন চিকিৎসক বলেছেন, বেশ কিছু হাসপাতাল ভাঙচুরের কথা শুনতে পাচ্ছেন; ফলে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা দরকার বলেও তিনি মনে করেন। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং নিরপত্তা সংক্রান্ত বিষয়কে সামনে রেখে চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ দ্রম্নত নিশ্চিত করবে এমনটি কাম্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এর আগে নানা সময়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে অনেকে দরিদ্র হয়ে পড়ছেন বলেও বিভিন্ন সময়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে, দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকটের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। এখন যখন জানা যাচ্ছে, জটিল রোগের চিকিৎসায় রোগীরা হাসপাতালে অপারেশনের জন্য দিন গুনছেন। অনেকে অপারেশনের সিরিয়াল নিয়ে শয্যায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু গত ১৬ জুলাই থেকে বেশিরভাগ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের অপারেশন ছাড়া অন্যসব অপারেশন বন্ধ আছে- তখন এটি আমলে নিয়ে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা খাতের সামগ্রিক সংকট আমলে নেওয়া এবং অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে চিকিৎসা খাতের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত পদক্ষেপ নেবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।