যে কোনো পরিস্থিতিতে অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টি সামনে এসেছে। বিভিন্ন খাতে যেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেমনি একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়ার খবর জানা গেছে। প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে সংঘাত শুরু হয়। গত ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক ও বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এছাড়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শেয়ারবাজারে বড় দরপতনের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তৈরি পোশাক খাত হলো দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। এই খাতের অর্থনীতিসহ নানা ধরনের আশঙ্কা উঠে এসেছে। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ইন্টারনেট, কারখানা ও বন্দর বন্ধ থাকায় তৈরি পোশাক খাতের বেশ কিছু কোম্পানিকে নিজস্ব খরচে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হয়েছে বলে জানা যায়। নির্ধারিত সময়ে পাঠাতে না পারায় অনেক কোম্পানিতে বাড়তি সময় দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান; এটির পাশাপাশি জানা যায়, অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আবার মূল্যছাড়ও দাবি করছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে অর্থনীতি সংকটকে কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে পোশাক খাতের সৃষ্ট আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। চলতি মাসের শুরুর দিকে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) দেওয়া পণ্য রপ্তানির হিসাবে গরমিলের বিষয়টি সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, তিন অর্থবছর ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে যখন তিন অর্থবছর ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে বলে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিও এড়ানোর সুযোগ নেই।
অন্যদিকে জানা গেছে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ৬ দিন প্রায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল পণ্য পরিবহণ। এতে এই খাতে দৈনিক ১০৮ কোটি টাকা করে মোট ৬৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট এফবিসিসিআই'র সভাপতি বরাবর লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহণ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিষয়টি জানিয়েছেন। এছাড়া যাত্রী পরিবহণসহ অন্যান্য খাতেও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া সম্প্রতি এটাও জানা যাচ্ছে যে, ৩ দিন ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের ই-কমার্স খাতে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। আর ১০ দিনে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ই-কমার্স খাতে ৬০০ কোটি টাকা, ই-টুরিজম খাতে ৩০০ কোটি টাকা এবং ই-লজিস্টিক খাতে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি এড়াতে ভবিষ্যতে যে কোনো পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ না কর হয় সে বিষয়টি ই-কমার্স নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। অন্যদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৩০৭ কোটি টাকার চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানির ক্ষতি হয়েছে বলেও খবরে উঠে এসেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি খাতেই অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা আমলে নেওয়া জরুরি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পরিকিল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।