শেখ হাসিনা সরকারের পতন দেশে শান্তি ফিরে আসুক
প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ভয়াবহ পতন হয়েছে। কোটা সংস্কারের শিক্ষার্থীদের যে দাবি আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফায় পরিণত হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। এই সংবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ বিজয় উলস্নাস করছেন। এখানে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন। মাত্র সাত মাসেই ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন ঐকতানে অভাবনীয় পতন হয়েছে সেই সরকারের। এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তাল গোটা দেশ। কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে শুরুর দিকে গ্রাহ্যই করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। উল্টো তাদের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা নানাভাবে অসম্মানজনক বক্তব্য দিয়ে হেয় করেন। একপর্যায়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দমনের নামে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রূপ নেয় সংঘাত-সহিংসতায়। প্রাণহানিতে জড়িতদের বিচারসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠে আন্দোলন থেকে। এটা স্পষ্ট, এ আন্দোলনে মানুষের অংশগ্রহণ ব্যাপক, সর্বস্তরের মানুষ এতে যোগ দিয়েছেন।
নজিরবিহীন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গত রোববার অগ্নিগর্ভ ছিল রাজধানীসহ সারাদেশ। এতে এক সাংবাদিক ও ১৪ পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। আন্দোলন ঘিরে গত কয়েকদিনে এ নিয়ে মোট নিহত হয়েছেন তিন শতাধিক। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দিনভর আন্দোলনকারী আওয়ামী লীগ সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেশ কয়েক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৭টি থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রেঞ্জ অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অনেকের হাতে লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অন্তত ৩৫ কার্যালয়ে ভাঙচুর শেষে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিপরীতে বিএনপির দুটি কার্যালয়ে আগুন দেয় সরকার সমর্থকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ।
দেশ ও জাতির জন্য এহেন হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষতি হয়েছে দেশের অর্থনীতিরও। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন। তিনি প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। অচিরেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে।
এটা সত্য সমাজে যে বৈষম্য চলছে, সেটা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করেছে। আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ চেয়েছিলাম। তা এখনো পাইনি। পাকিস্তান আমলে একটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা ছিল, আঞ্চলিক বৈষম্য ছিল, সেটা দূর করতে আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে বিশেষত সামাজিক বৈষম্য রয়ে গেল, শুধু রয়ে গেল না, এখানে যত অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে ততই সে বৈষম্য বেড়েছে। কাজেই শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করেছে সেটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র হলো অধিকার ও সুযোগের সাম্য- যা সংবিধানে লেখা থাকলেও বাস্তবে নেই। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে আমরা বৃহত্তর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসবেই দেখব। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা-পূর্ব আন্দোলনগুলোতে সমাজতন্ত্রীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদীরাও ছিল; তবে সমাজতন্ত্রীরাই এগিয়ে ছিল, যদিও ক্ষমতায় চলে আসে জাতীয়তাবাদীরা। স্বাধীন বাংলাদেশেও একই চিত্র বিদ্যমান। যার কারণে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বৈষম্য দূর হয় না। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে। দেশে শান্তি ফিরে আসুক, সব ধরনের বৈষম্য দূর হোক। নতুন নেতৃত্ব দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা করছি।