খাদ্যমূল্যস্ফীতিতে 'লাল' শ্রেণিতে আছে বাংলাদেশ। গত এক বছরের খাদ্যমূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে এই শ্রেণিতে রেখেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এই শ্রেণিতে আছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। প্রতি ছয় মাস পর পর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্যমূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে।
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, দুই বছর ধরে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। খাদ্যমূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ১০ শতাংশ। অবশ্য রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বড় অর্থনীতির দেশগুলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারেনি। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষকে গড় আয়ের অর্ধেকের মতো খরচ করতে হয় খাবার কিনতে। গরিব মানুষের খাবারের পেছনে ব্যয় আরও বেশি। গরিব মানুষ তাদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ করেন খাবার কেনার পেছনে। অথচ তাদের সে তুলনায় আয় নেই। দেশের স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য এটা বড় ধরনের সংগ্রাম। বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় সমাধানের উদ্যোগগুলো সাময়িক। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে পারলেও বাংলাদেশ তা পারেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) খাদ্যমূল্যস্ফীতির যে হিসাব দিচ্ছে, এর যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আছে। সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। সামনের দিনে খাদ্যমূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। কারণ, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা আছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। অর্থনীতিও স্বাভাবিকভাবে চলছে না।
উলেস্নখ্য, খাদ্যমূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্যমূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে 'বেগুনি' শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্যমূল্যস্ফীতি, তাদের 'লাল' শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে 'হলুদ' ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে 'সবুজ' শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্যমূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ গত দুই বছরজুড়ে লাল শ্রেণিতে আছে। দেশের খাদ্যমূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির জন্য দেশের এক শ্রেণির অসাধু ও লোভী ব্যবসায়ীরা দায়ী। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।