বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। ফলে, এই খাতের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, একক দেশ হিসেবে গত বছরও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে ৭০০ কোটি ডলার কম তৈরি পোশাক রপ্তানি করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আর বরাবরের মতোই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীন। বর্তমানে তাদের বাজার হিস্যা ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিস্নউটিও) 'ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩: কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস' শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আমলে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসের শুরুতে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) পণ্য রপ্তানির তথ্যের গরমিল সামনে এনে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ডবিস্নউটিও ২০২৩ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তা ইপিবির চেয়ে ৯শ' কোটি ডলার কম। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, ইপিবি দাবি করেছিল, গত বছর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ডলার। তবে ডবিস্নউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮শ' কোটি বা ৩৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ সময় বিশ্বের তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আমরা মনে করি, একক দেশ হিসেবে গত বছরও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ- এটি ইতিবাচক যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া এই খাতে যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সংকট তৈরি হলে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য প্রতিশ্রম্নত ক্রয়াদেশ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে ক্রেতারা, এমন আশঙ্কার কথাও সামনে এসেছিল। ফলে, সার্বিক বিষয়গুলো সামনে রেখে পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ অব্যাহ রাখতে হবে।
উলেস্নখ্য, ডবিস্নউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭শ' কোটি ডলার। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ইপিবির রপ্তানি তথ্যের যে গরমিল প্রকাশ করেছে, তাতে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রকৃতপক্ষেই ৪৫ বিলিয়নের অনেক কম হয়েছে। এটা আমলে নেওয়া দরকার, করোনার আগে থেকে চীনের রপ্তানি কমলেও বিশ্ববাজারে এখনো দেশটি শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক। গত বছর চীন ১৬৫ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৫শ' কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তার আগের বছর তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮২ বিলিয়ন বা ১৮ হাজার ২শ' কোটি ডলারের। তার মানে গত বছর চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া একক দেশ হিসেবে বিশ্বে তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম। গত বছর দেশটি ৩১ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১শ' ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের বাজার হিস্যা ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এটা মনে রাখা দরকার, ভিয়েতনামের কাছে ২০২০ সালে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান খুইয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও ২০২১ সালে বাংলাদেশ আবার দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার করে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি ধরে রাখতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, একক দেশ হিসেবে গত বছরও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ- এটি আমলে নিয়ে অগ্রগতি বজায় রাখতে হবে। এছাড়া বিগত সময়ে এই খাতে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, শ্রমিক নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা কিছু আলোচনায় এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।