দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। ফলে, রোমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, দেশে প্রবাসী আয় আসা উলেস্নযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে যে আয় এসেছে, তা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
তথ্য মতে, জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। উলেস্নখ্য, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে গত ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। জানা যায়, গত মাসের প্রথম ৩ সপ্তাহে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১ থেকে ২০ জুলাই এসেছে ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। আর ২১ থেকে ৩১ জুলাই আয় এসেছে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৩১ জুলাই এক দিনে এসেছে ১২ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, গত জুনে ২৫৪ কোটি ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জুনে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল, তা ছিল একক মাস হিসেবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
আমরা বলতে চাই, রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা কতটা উদ্বেগের সেটি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। এর আগে, বিশ্লেষক এবং ব্যাংকিং খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরিস্থিতির যথাযথ রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে না আনতে পারলে একদিকে রেমিট্যান্স যেমন কমবে, তেমনি দেশ থেকেও অবৈধ পথে বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কা বাড়বে। অন্যদিকে, বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এখন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও নেতিবাচক ক্যাম্পেইনের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা দুর্বল হলেও এটি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসবে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
বলা দরকার, এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন প্রতি মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার কারণে একপর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। যখন সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, দেশে প্রবাসী আয় আসা উলেস্নযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে- তখন তা এড়ানো যাবে না। কেননা, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে রিজার্ভে তার প্রভাব পড়বে।
সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতিতে রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে। ফলে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে উদ্যোগী হতে হবে। স্মর্তব্য, নানা সময়ে রেমিট্যান্সে ধস নামা বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে প্রবাসী আয়ে ধস নামলে বিষয়টি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি রেমিট্যান্সের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।