জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনদুর্ভোগের বিষয়টি নতুন নয়। সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয় এমন আলোচনা বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাতভর বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। এ ছাড়া বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা থাকলেও পাহাড় ছেড়ে কেউ যায়নি আশ্রয়কেন্দ্রে। তথ্য মতে, গত বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি বৃহস্পতিবার দিনভর অব্যাহত ছিল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আমলে নেওয়া দরকার, টানা বৃষ্টিতে নগরীর ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, কাপাসগোলা, চকবাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জও বাকলিয়াসহ নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নগরীর জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশ ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় মানুষের বাসা, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। নগরীর বিভিন্ন খাল, নালা-নর্দমা থেকে পানি উপচে রাস্তা তলিয়ে গেছে। জলমগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ এবারই নয়, বিভিন্ন সময় জলবাদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শুধু চট্টগ্রামই নয়, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হয়। ফলে যখন চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে আবারও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্ট হলো, তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে যে, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। শহরের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তা-ঘাটসহ অনেক এলাকা। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, একদিকে জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি অন্যদিকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোয় সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, নগরের ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলোয়। পাহাড়ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করছে। ফলে এ বিষয়গুলোও এড়ানো যাবে না। এ ছাড়া লক্ষনীয়, জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে শুরু হওয়া এসব প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হলে নগরবাসীর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দূর হয়নি। উল্টো দিন দিন সমস্যা প্রকট হয়েছে বলে জানা যায়। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি বলতে চাই, জলাবদ্ধতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কতটা উদ্বেগের- সেটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছে যে, অপরিকল্পিত নগরায়ন জলবাদ্ধতার অন্যতম কারণ। ফলে এটিও এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।