জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ কঠোর নজরদারি প্রয়োজন
প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনি মতামত দেওয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এই দলগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আর এই নামে রাজনীতি করতে পারবে না। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলো।
আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবার নিষিদ্ধ হওয়ার ৫০ বছরের বেশি সময় পরে আবার নিষিদ্ধ হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। যদিও গত দেড় দশকে বিভিন্ন সময় দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ আলোচনায় এলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে কখনোই কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অস্তিত্ব দৃশ্যত বিলীন হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর সাধারণ ক্ষমার আওতায় জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেও দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ ছিল বহু বছর।
পরে ১৯৭৬ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল মিলে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আই.ডি.এল) নামে একটি রাজনৈতিক পস্নাটফর্মের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামী তৎপরতা শুরু করে। যদিও রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হতে শুরু করে আরো তিন বছর পরে। ১৯৭৯ সালে জামায়াত ইসলামী সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পায়। পরে আরও সুসংগঠিত হতে পেরেছে কারণ তারা ক্যাডার ভিত্তিক দল বলে নেতারা যেভাবে বলে কর্মীরা সেভাবেই কাজ করে।
দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর যাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত ব্রিটিশ আমলে। সাইয়েদ আবুল আ্থলা মওদুদী ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে পরের বছরেই এর সদর দপ্তর লাহোর থেকে নেওয়া হয় ভারতের পাঠানকোটে। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ১৯৫৮ সালে অন্য সব দলের সঙ্গে জামায়াতের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করেন তখনকার সেনা শাসক আইয়ুব খান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ১৫১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে চারটি আসন পায় দলটি। জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে এবং এর নেতারাও সক্রিয়ভাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন। তখন পাকিস্তানি শাসকদের সহযোগিতায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এই দলটির নেতৃত্বেই রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী হয়েছিল যারা ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডসহ যুদ্ধকালীন গণহত্যায় সহযোগিতার জন্য তীব্রভাবে ঘৃণিত ও নিন্দিত। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নিষিদ্ধ হলেও তাদের ওপর কঠোর নজর রাখতে হবে।