অর্থপাচারের আশঙ্কা যথাযথ উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
টেকসই উন্নয়ন ও একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে বিদেশে অর্থ পাচার অন্যতম প্রতিবন্ধক। ফলে যে কোনো কারণে অর্থ পাচারের আশঙ্কা বেড়ে গেলে তা উদ্বেগজনক- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বাংলাদেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রবাসীদের মধ্যে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণার কারণে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, বিশ্লেষক এবং ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, পরিস্থিতির যথাযথ রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে না আনতে পারলে একদিকে রেমিট্যান্স যেমন কমবে, তেমনি দেশ থেকেও অবৈধ পথে বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কা বাড়বে।
আমরা মনে করি, বিশ্লেষক এবং ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতো আমলে নেওয়া এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। উলেস্নখ্য যে, মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং এর জের ধরে কারফিউ জারি, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় ১৬ জুলাই থেকেই থমকে গেছে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ- এমনটি প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়। অথচ মাত্র এক মাস আগেই অর্থাৎ জুন মাসে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল বাংলাদেশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও ব্যাংকিং চ্যানেল বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
এটাও উলেস্নখ্য যে, বিদেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ গ্রহণে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর একটি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, প্রবাসী আয় নিয়ে এখনি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো হয়নি। 'এবার কয়েকদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা অর্থ পাঠাতে পারেনি হয়ত, যে কারণে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ এখন কম। ধীরে ধীরে এটি ঠিক হয়ে আসবে।' বলেও জানান। কিন্তু অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলছেন, রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকলে এবং আস্থা ফিরে না এলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় যেমন কমবে, তেমনি দেশ থেকে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচারের আশঙ্কাও বেড়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে তা কতটা উদ্বেগের সেটি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে গত প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল বাংলাদেশে, যার পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত অর্থবছরের তুলনায়ও বর্তমান অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেশি আসছিল। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে ২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এখন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও নেতিবাচক ক্যাম্পেইনের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা দুর্বল হলেও এটি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসবে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন বিশ্লেষক এবং ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতির যথাযথ রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে না আনতে পারলে একদিকে রেমিট্যান্স যেমন কমবে, তেমনি দেশ থেকেও অবৈধ পথে বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কা বাড়বে- তখন অর্থ পাচারের আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগেও বিভিন্ন সময় অর্থ পাচার সংক্রান্ত আশঙ্কা উঠে এসেছে। ফলে, অর্থ পাচার রোধে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে অর্থ পাচার রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।