ডলারের বাজারে আবারও অস্থিরতা শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার খোলাবাজারে এক ডলার ১২৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। আর এটিই ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড। লক্ষণীয় যে, আইএমএফের পরামর্শে 'ক্রলিং পেগ' পদ্ধতি চালু করে গত ৮ মে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দর ঠিক করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সিদ্ধান্তের পর স্থিতিশীল ছিল বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। কিন্তু গত কয়েক দিনে ডলারের দরে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। খোলাবাজারে বা মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে দুই দিনে প্রতি ডলার চার টাকা বেড়ে ১২৪ টাকায় উঠেছে। ব্যাংকগুলোও বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনছে। গতকাল কিনেছে ১১৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এছাড়া জানা যাচ্ছে খোলাবাজার দর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার থেকে বিভিন্ন মানিচেঞ্জারে অভিযান শুরু করেছে।
আমরা বলতে চাই, ডলার নিয়ে যে অস্থিরতার বিষয়টি সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলা দরকার, ডলার বাজারের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অস্থিরতার প্রভাব ডলার বাজারে পড়েছে। তথ্য মতে, ব্যাংকগুলোকে বেশি রেটে রেমিট্যান্স কিনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছে। এরপর থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে দাম বাড়তে থাকে। ব্যাংকগুলোতে তখন ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ১১৮ টাকা ৭০ পয়সা করে রেমিট্যান্স কিনেছে। মানিচেঞ্জারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ১২৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এরপরও ডলারের চাহিদা রয়েছে।
আমরা বলতে চাই, ডলারের বাজারে আবারও অস্থিরতার বিষয়টি যখন জানা যাচ্ছে তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সার্বিক প্রভাব বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না চলতি বছরের মে এবং জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ডলারের দর বাড়ানোর পর মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলার। জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে ভালো রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর তিন কার্যদিবস সাধারণ ছুটিসহ ৫ দিন ব্যাংক বন্ধের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি চলে আসে। তথ্য মতে, জুলাইয়ের ১৯ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। শুরুর ১৮ দিনের ধারা বজায় থাকলে পুরো মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডলারের বাজারে আবারও অস্থিরতার বিষয় আমলে নিতে হবে। এছাড়া এই বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে যে, ডলারের দর আরেক দফা বাড়লে আমদানি ব্যয় বাড়বে। ফলে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হবে। যা এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া জুলাইয়ের ১৯ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার- এটিও এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।