বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

মাছ উৎপাদনে সাফল্য উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

  ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মাছ উৎপাদনে সাফল্য উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

প্রবাদ আছে মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ-ভাত বাঙালির আবহমান কালের সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। বাঙালির মৎস্য প্রীতির উলেস্নখ আছে বেশ কিছু ধ্রম্নপদী সাহিত্যে। বাঙালি শাস্ত্রকার ভগদেব ভট্ট এগারো শতকে লিখেছেন, মাছ খাওয়া শরীরের জন্য অশেষ হিতকর। অনেক মৎস্য বিশেষজ্ঞ মাছের তেলের অনেক গুণের কথা তাদের লেখায় উলেস্নখ করেছেন। কেউ কেউ শুঁটকি মাছের কথাও উলেস্নখ করে বলেছেন, বিশেষ করে বঙ্গের লোকদের মধ্যে এ মাছ খুবই জনপ্রিয় ছিল। অষ্টম নবম শতকের পাহাড়পুর ও ময়নামতি বৌদ্ধ বিহারের অনেক পোড়ামাটির ফলকে মাছ কোটা, ঝুড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আছে। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দ রাম চক্রবর্তী বাঙালির অন্যতম ব্যঞ্জন হিসেবে মৎস্য রন্ধনের চমৎকার বর্ণনা করেছেন- কৈ ভাজে গন্ডা দশ মরিচ গুড়িয়া আদা রসে। যুগ সন্ধিক্ষণের রসিক কবি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন- ভাত-মাছ খেয়ে বাঁচে বাঙালি সকল। উলিস্নখিত পংক্তি ও উপাত্তসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মাছের প্রয়োজনীয়তা ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। বিস্তর জলাশয় ও পরিবেশগত সুবিধার কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম মৎস্যসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিবেচিত। এ দেশের আছে প্রায় ৪৯ লাখ হেক্টর জলজসম্পদ, প্রজাতি বৈচিত্র্যের দিক থেকেও অনন্য এ দেশ। মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ- চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

যে সব প্রজাতির মাছ সর্বোচ্চ ২৫ সে. মি. পর্যন্ত বড় হয় তাদের সাধারণ ছোট মাছ বলে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে বিদ্যমান স্বাদু পানির ২৬৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে অধিকাংশই ছোট মাছ শ্রেণিভুক্ত বলে ধারণা করা হয়।

দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের মধ্যে গুলশা, পাবদা, মেনি (ভেদা), শিং, কৈ, টাকি, ফলি, দেশি পুঁটি, বাচা, খৈলশা, টেংরা, মাগুর, চাপিলা, বাতাসি, বাইন, বেলে, চ্যালা, বাটা, কাজলি, গুজি, লাচু, টাটকিনি, মলা, ঢেলা, গুতুম, কাকিলা, ডারকিনা ইত্যাদি।

সারা বিশ্বে সহজ পাচ্য উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষ হিসেবে মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ অধিক পরিমাণে ভিটামিন 'এ' এবং ভিটামিন 'ডি' বিদ্যমান- যা মানবদেহের হাড়, দাঁত, চর্ম ও চোখের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তা'ছাড়া এ সমস্ত মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থাকে- যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। দেশীয় ছোট মাছ বিশেষ করে মলা, পুঁটি, ঢেলা ইত্যাদি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ বিধায় রাতকানা ও রক্ত শূন্যতাসহ অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ববতী মহিলাদের ছোট মাছ খাওয়ালে বাচ্চার মস্তিস্ক, চোখের গঠন এবং হাড় ও দাঁতের গঠন সঠিক ও স্বাভাবিক হয়। এছাড়া সত্তর শতাংশ মা ও শিশু রক্তশূন্যতার শিকার হয় মূলত আয়রনের অভাবে- যা ছোট মাছের দ্বারা পূরণ করা যায় সহজেই। বাংলাদেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বর্তমানে ছোট মাছের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে আবাস স্থলের ব্যাপক সংকোচন এবং প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশের বিবর্তন। মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রম তৈরির মাধ্যমে ছোট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সার্বিক সফলতা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে