পোশাক খাতে চ্যালেঞ্জ কার্যকর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। ফলে, যে কোনো কারণেই এই খাতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হলে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে জানা যাচ্ছে যে, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সময়মতো তৈরি পোশাক জাহাজীকরণ করতে না পারায় বেশ কিছু কোম্পানিকে নিজস্ব খরচে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। যদিও নির্ধারিত সময়ে পাঠাতে না পারায় অনেক কোম্পানিকে বাড়তি সময় দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটাও সামনে এসেছে যে, অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আবার মূল্যছাড় দাবি করছে। এমনকি নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতারা কিছুটা ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা- যা এড়ানোর সুযোগ নেই।
তথ্য মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস আকার ধারণ করে। পরে সংঘাত আরও বাড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারি করে সরকার। আর এর ফলে, কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। চার দিন চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। গত ২৩ জুলাই পর্যায়ক্রমে কারখানা চালুর পাশাপাশি বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও শুরু হয়। পরদিন ২৪ জুলাই থেকে সব কারখানা আবার উৎপাদনে ফেরে। বলা দরকার, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোশাক খাত সক্রান্ত নানা বিষয় সামনে আসছে। গত গ্রীষ্মের তুলনায় আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে ১০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেশি পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই আশায় আপাতত গুড়ে বালি এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে। এছাড়া গত তিন কর্মদিবসে প্রতিশ্রম্নত যেসব ক্রয়াদেশ আসার কথা ছিল, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ আসেনি। সেই ক্রয়াদেশ আদৌ আসবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে- এমনটিও জানিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান।
আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও সামনে এসেছে, ঢাকা থেকে ইউরোপের গন্তব্যে কার্গো বিমানে প্রতি কেজি তৈরি পৈাশাক ৫ ডলারে পাঠাতে হচ্ছে। অথচ কলকাতা থেকে কেজি প্রতি খরচ ১ ডলার ৬০ সেন্ট। এছাড়া অগ্রিম অর্থ না দিলে কার্গোর গেটের ভেতরে পণ্যই নিতে দিচ্ছে না। ফলে, এই বিষয়গুলোও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। সার্বিকভাবে পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, 'তৈরি পোশাকশিল্প এমনিতেই একটা চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। এ সময়ে বড় একটা সংকটের মধ্যে পড়ে গেলাম। নতুন ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে একটা ধাক্কা অবশ্যই আসবে। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আমরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। অধিকাংশ ক্রেতাই আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছে।'
এছাড়া লক্ষণীয়, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। চলতি মাসের শুরুর দিকে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) দেওয়া পণ্য রপ্তানির হিসাবে গরমিলের বিষয়টি সামনে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, তিন অর্থবছর ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে যখন তিন অর্থবছর ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন এই পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ব্যবসায়ীররা বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কী পরিমাণ পণ্য উড়োজাহাজে করে পাঠাতে হবে কিংবা মূল্যছাড় দিতে হবে, সেটি বুঝতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমের জন্য প্রতিশ্রম্নত ক্রয়াদেশ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে ক্রেতারা। যদিও সেটি পরিষ্কার হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলেও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।