বর্তমানে প্রায় সব মানুষ উচ্চ সফলতা অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, যা চারপাশে তাকালে নজরে আসে। আবার পত্রিকার পাতা অবলোকন করতে দেখতে পাওয়া যায় হাজারও উচ্চ শিক্ষিত ও কর্মক্ষেত্রে সফল ব্যক্তির পরিবারের বিচ্ছেদের ঘটনা। পত্রিকার পাতাটি একটু পড়তেই জানা যায় যে পারিবারিক পরস্পরের সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে, হয়তো আত্মহত্যাকারী ওই ব্যক্তির বউ, মেয়ে, ছেলে অথবা হতে পারে সে নিজেই। কিন্তু কেন এসব হচ্ছে? এই কেন এর প্রশ্ন আত্মহত্যাকারীর অভিভাবককে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় যে, তার সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। আবার অনেক সময় দেখা যায় সেই উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিটি একসময় গ্রামে থাকা পিতা-মাতার সঙ্গেও সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এটা হতে পারে তার উচ্চশিক্ষার বদৌলতে। একটি বিষয় সবার কাছে বর্তমান সময়ে পরিষ্কার হয়েছে যে, টাকার অভাবে কেউ আত্মহত্যা করে না বা করছে না। যারা আত্মহত্যা করছে তাদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। আবার দেখা যায় যেসব মানুষ রাস্তাঘাটে অপরাধ (ডাকাতি, ছিনতাই) করে তারাও সেই উচ্চবিত্ত পরিবারেরই সন্তান। কিন্তু কেন তাদের দ্বারা এসব হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটি জাতিকে সোজা করে রাখার মতো একটা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যখন স্যারদের সঙ্গে কথা বলে কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে জানতে পারি যে প্রায় সব স্যারদের পারিবারিক সম্পর্ক ভালো না। চাকরি শেষ করার পর অধিকাংশ স্যারদের পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে বন্ধন ভালো থাকে না। নিঃসঙ্গতা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? এসব প্রশ্ন ও উত্তরের সম্মুখীন হন এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছেন আমাদের চোখে উচ্চ সফলতা অর্জনকারী ব্যক্তি। আমরা হয়তো ভুলে যাচ্ছি, পৃথিবীতে টাকা এবং সুখ দুটো ভিন্ন জিনিস। টাকা আছে বলেই যে সুখ এসে ধরা দেবে বিষয়টা এমন নয়। কত মানুষ আছে কোটি কোটি টাকার মালিক অথচ অশান্তিতে ভুগছে। সেদিন একজন ব্যক্তিকে দেখলাম, সে লোকটা হাজার হাজার টাকার মালিক। তার ২ জন ছেলে আছে। সে শুরু থেকে ভাবত যে, তার ছেলে একজন উচ্চশিক্ষিত হবে। কিন্তু সেই ছেলে আজ সমাজের মধ্যে সবার পরিচিত মাদকাসক্ত ছেলে। বাবার অসংখ্য টাকা থাকতেও ছিনতাই করতে ধরা পড়েছে কয়েকবার। তার বাবাকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'হয়তো অঢেল টাকা-পয়সা ও সম্পদের প্রাচুর্যের উপহার এসব অশান্তি।' আবার এক লোককে দেখলাম, সে ব্যক্তিটি সারাদিন রিকশা চালায়। সারাদিনে যা উপার্জন করে তা দিয়ে পরিবার চালায়। তার অঢেল সম্পদ নেই। অঢেল সম্পদের পাহাড় ধ্বংসের কোনো চিন্তাও নেই। সারাদিন খাটে, সারারাত সুন্দর নিশ্চিতে ঘুমায়। অথচ যে সম্পদশালী সে সারাদিন সম্পদের পাহাড় উঁচু করার চিন্তায় থাকেন এবং সারারাত সেই সম্পদের পাহাড় রক্ষা করার চিন্তায় রত থাকেন। সুতরাং শান্তি এমন এক অমূল্য ধন যা পৃথিবী সমপরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে কেনা সম্ভব নয়। উচ্চ সফলতা কখনো সুখ শান্তির কারণ হতে পারে না। উচ্চ সফলতা ও অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদের পাহাড় সব অশান্তির কারণ যা আমরা অবলোকন করতে পারছি প্রতিদিন।
আব্দুল ওহাব
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়