সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করেছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে, বন্ধু বন্ধুকে অবলীলায় হত্যা করছে। স্ত্রী স্বামীর লাশ ছয় টুকরা করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। স্বামী ঠুনকো কারণে স্ত্রীকে সন্তানসহ হত্যা করছে। এমনকি প্রেমের কারণে অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে, হতাশা নিঃসঙ্গতা বঞ্চনা অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন- স্নেহ, ভালোবাসা মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। এর পাশাপাশি করোনাকালে সমাজে ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও নারী নির্যাতন অবমাননা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে- যা সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নজির।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় নিজ ঘর থেকে দুই মেয়েসহ স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার সকাল ৯টার দিকে পৌর এলাকার বিজয়পাড়া থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃতরা হলেন- বিজয়পাড়া গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া (৩২) তার স্ত্রী জান্নাত বেগম (২২), বড় মেয়ে ফাহিমা (৪) ও ছোট মেয়ে তাহমিদা (২)। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমাতে যান সোহাগ। প্রতিদিন তারা ভোরে ঘুম থেকে উঠলেও ওইদিন সকালে তাদের দেখতে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ডাকাডাকি শুরু করেন। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙে চারজনের মরদেহ দেখতে পান পুলিশ। তাদের মধ্যে সোহাগ ও তার এক মেয়ের লাশ ঘরের আড়ায় ঝুলছিল। স্ত্রী জান্নাতের মরদেহ খাটে এবং আরেক মেয়ের লাশ খাটের পাশে পড়ে ছিল। পারিবারিক কলহ থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোহাগ প্রথমে তার স্ত্রী জান্নাতকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেন তিনি। এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কী হতে পারে?
সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। যা বর্তমান সমাজে প্রকট। আমরা চাই, পরিকল্পিত ও বিন্যস্ত সমাজ। নীতিবোধ ও চারিত্রিক মূল্যবোধ সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি- যা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এসব রোধ করতে না পারলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে; অন্যদিকে পরিবারের সদস্যরাও থাকবে নিরাপত্তাহীন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।