টেকনাফ সীমান্তে নতুন আতঙ্ক সতর্কতা জরুরি

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, টেকনাফ সীমান্তের মানুষের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি। তথ্য মতে, শনিবার ভোর ৪টা থেকে থেমে থেমে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটছে মংডু সীমান্তবর্তী এলাকায়। এছাড়া রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৮ ঘণ্টায় অন্তত ১৮৮টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেই সঙ্গে টেকনাফের কয়েকটি গ্রামে ওপারের গুলি এসে পড়ছে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কে রয়েছেন মানুষ। আমরা মনে করি, সীমান্তে নতুন করে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে তা আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বলা দরকার, টেকনাফ সদর ও পাশের সাবরাং ইউনিয়নের বিপরীতে মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদ দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। টানা পাঁচ মাস মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই-সংঘাত চলছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর হঠাৎ শনিবার ভোর থেকে ওপারে বিকট শব্দে মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ওপার থেকে ছোড়া রাইফেলের গুলি এপারে এসে পড়ছে। ফলে লোকজনের আতঙ্ক আরও বাড়ছে। গত ২১ জুলাই সকাল ও বিকালে ওপারের চারটি গুলি এসে পড়ে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে। দুটি গুলি পড়েছে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকার একটি দোকানের সামনে। একটি পড়েছে শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ার একা বাসিন্দার বাড়ির আঙিনায় এবং আরেকটি পড়েছে একই পাড়ার একটি বসতবাড়ির সামনের পিলারে। এতে পিলারটি ক্ষতিগ্রস্তও হয়। সামগ্রিকভাবে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, গুলি এসে পড়ার ভয়ে ঘরের লোকজন বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না এমনটিও খবরের মাধ্যমে জানা যায়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে চলা সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন সময়েই। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, মিয়ানমানের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। এছাড়া সীমান্তে অনুপ্রবেশের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার সীমান্তে আতঙ্কের যে ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। লক্ষণীয় যে, এলাকার মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করতে পারছেন না জানিয়ে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বলেছেন, সব সময় ভয়ের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। এপার থেকে সবকিছু দেখা যায়। এত দিন বোমার শব্দে এলাকার মানুষ আতঙ্কে ছিলেন, এখন নতুন আতঙ্ক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ওপারের গুলি- এমনটিও জানিয়েছেন। টেকনাফে গুলি এসে পড়ার ঘটনায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, শাহপরীর দ্বীপের কয়েকটি স্থানে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়েছে বলে তিনি জানতে পারেন। রাখাইন রাজ্যে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়ে লোকজনকেও সতর্ক করা হচ্ছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া স্মর্তব্য, এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- যা এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।