পাঠক মত
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ জরুরি
প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অভাবনীয় ও অনস্বীকার্য। বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন দেয় এবং আমাদের থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নেয়। বৃক্ষ আমাদের খাদ্য দেয়, কাঠ দেয় এবং বৃক্ষ মাটির ক্ষয়রোধ করে। বৃক্ষ আমাদের পরিবেশকে সজীব ও সতেজ রাখে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছে এই বৃক্ষ। বৃক্ষরোপণ করে লাভবান হয়নি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে আছি তা বৃক্ষের কাছ থেকে পাই। এ ছাড়া বৃক্ষের কাছ থেকে খাদ্য পাই, পরিধেয় বস্ত্র পাই, আশ্রয়ের জন্য বাসস্থান পাই, জ্বালানি পাই, বিদু্যতের খুঁটি পাই, নৌকার কাঠ পাই, বৈচিত্র্যপূর্ণ আসবাবপত্র পাই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই উপকারী বৃক্ষকেই আমরা কেটে ফেলছি। প্রতিনিয়ত বাসস্থানের জন্য গাছপালা কাটা হচ্ছে। বর্তমানে মানুষের চলাচলের রাস্তা ও পাকাকরণের তাগিদেও রাস্তার ধারের গাছপালা কাটা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে গাছপালার বিস্তার কমিয়ে আনলে পরিবেশের কী হবে? বৃক্ষের ক্রমনিধন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সৃষ্টি করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বিশেষত গ্রীষ্মকালে দুঃসহ গরম। এই যে বেশ কিছুদিন ধরে সারাদেশে রৌদ্রের তীব্রতায় দেশের জনজীবন ভোগান্তিতে পড়েছে। দিনদিন ভূপৃষ্ঠে সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে! এটা কি শুধু প্রাকৃতিক কারণ নাকি মানুষও দায়ী। অবশ্যই মানুষ এজন্য অনেকাংশেই দায়ী। কারণ আমরা যে হারে বৃক্ষ নিধন করছি সে হারে বৃক্ষ রোপণ করছি না। আমরা নির্বাচনে বৃক্ষ নিধন করে বন উজাড় করে দিচ্ছি। ফলে দিনদিন বৃক্ষ হ্রাস পাচ্ছে যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। লক্ষণীয় বিষয় হলো, অনেক সময় দেখা যায় প্রয়োজন বেধে রাস্তার ধারের অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে যদি বৃক্ষ রোপণ করা যায় তাহলে অনেক গাছপালা নিধন রোধ করা সম্ভব হবে। আমরা কোনো কারণ ছাড়াই অথবা সামান্য কারণ দেখিয়ে বন উজাড় করে ফেলি। প্রকৃতির সবুজ-শ্যামল রূপ আজ আমাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্মমতার আঘাতে বিলীন হতে বসেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার উষ্ণতম স্থানের সঙ্গে শহরের বাইরে শীতলতম স্থানের দিন-রাতের ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য যথাক্রমে ৭ ও ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার ঢাকার মধ্যেও ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশে এখন কেবলই বৈচিত্র্যের অভাব, সময়মতো বৃষ্টির অভাব, অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, ২০৬০ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে। আমরা জানি, পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু যদি বৃক্ষের অপর নাম জীবন বলা হয় তাহলে অনেকের কাছেই অবাক লাগতে পারে। পানি ছাড়া কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না এটা সত্যি কিন্তু সেই পানির প্রধান দুটি উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান উপকরণ হচ্ছে অক্সিজেন, যা বৃক্ষ সরবরাহ করে। আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা বৃক্ষ থেকে পাই। কোনো কারণে বিশ্ব যদি কয়েক দিনের জন্য পানিশূন্য হয়ে যায় তাহলেও অনেক প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ এবং অন্য কোনো প্রাণীই এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারবে না। একটি দেশের ভৌগোলিক পরিবেশের জন্য দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে কোনো দেশের মোট অন্তত ২৫ শতাংশ দরকার, সেখানে আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৬ শতাংশ। কিন্তু কেন এই বেহাল দশা? বৃক্ষনিধন করে ইটভাটা, মিল-কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে আর নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে। এই অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা ও নগরায়নের কারণেই মূলত নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। গাছপালা তো কাটা হচ্ছেই আবার শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে, ধোঁয়ায় নিকটবর্তী গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফলদ ও ঔষধি গাছ। শিল্প-কারখানারও প্রয়োজন আছে। তবে তা বৃক্ষমুক্ত এলাকায় গড়ে তোলা উচিত। একটি গাছ কাটলে দুটি গাছের চারা রোপণ করতে হবে, এমন স্স্নোগান থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। সুন্দরবনেও বনদসু্যরা গাছ কেটে বিদেশে পাচার করছে। ফলে বন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দামি ও পুরনো গাছ, একটা পরিবেশের জন্য এটা বড় হুমকিস্বরূপ। এভাবে বৃক্ষ নিধনের ফলে পৃথিবী যেভাবে উষ্ণ হয়ে উঠছে, তাতে অবাধে সবুজ ধ্বংস হবে এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এখনই সময় এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার। তাহলে আমাদের করণীয় কী? আমাদের পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ করতে হবে। আমরা প্রতিবছর নির্দিষ্ট কিছুদিন শুধু বৃক্ষরোপণ করলে হবে না, যেখানে আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে আমরা সেখানেই বৃক্ষ রোপণ করব। আমাদের একদিকে বৃক্ষ নিধন বন্ধ এবং অন্যদিকে বেশি বেশি বনায়নের জন্য সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়োপযোগী। কেউ যাতে বৃক্ষ উজাড় করে অপরিকল্পিত মিল-কারখানা গড়ে না তোলে, সেদিকেও নজর দেওয়া আমাদের কর্তব্য। প্রথমত সরকারকে সরকারি বৃক্ষ নিধন ও পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়ির আঙিনার বৃক্ষ অযথা না কাটার পরামর্শ দিতে হবে। প্রাণী জগতের টিকে থাকার জন্য বৃক্ষের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চাই বৃক্ষরোপণ।
সাকিবুল হাছান
শিক্ষার্থী
ঢাকা কলেজ, ঢাকা