নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস
যথাযথ উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জের বিষয়। এছাড়া চিকিৎসক সংকট থেকে শুরু করে নানা ধরনের সমস্যাও বিদ্যমান। আর যদি এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কাজনক হারে কোনো রোগ বাড়ে তবে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে হেপাটাইটিসে (লিভারের প্রদাহ) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আমরা মনে করি, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা- এটি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
উলেস্নখ্য যে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন- হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্বে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসে সংক্রমিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না যে তার শরীরে এই ভাইরাস আছে! এছাড়া ভাইরাল হেপাটাইটিসজনিত কারণে পৃথিবীতে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের হেপাটাইটিস বি ও সি রয়েছে। আর বাংলাদেশে হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত এক কোটির বেশি মানুষ। অন্যদিকে আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বেসরকারি হিসাবে এই রোগে প্রতি বছর দেশে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্য হয়। বলা দরকার, এমন চিত্র যখন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন এই বাস্তবতায় 'এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার' প্রতিপাদ্যে পালিত হলো বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস।
আমরা মনে করি, হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধিসহ যে তথ্য সামনে আসছে তা এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার- চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস এখনই নির্ণয় করতে পরীক্ষা করতে হবে। যার শরীরে হেপাটাইটিস নির্ণয় হবে বা পজিটিভ আসবে, তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হবে। আর যাদের নেগেটিভ আসবে- তাদের জন্য 'হেপাটাইটিস বি' প্রতিরোধে নিতে হবে টিকা। অন্যদিকে 'হেপাটাইটিস সি'-এর কোনো প্রতিরোধক টিকা নেই। আমরা বলতে চাই, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের উলিস্নখিত বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একজন সহকারী অধ্যাপক ও লিভার বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, হেপাটাইটিস 'বি' ও 'সি' লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ। লিভার ক্যানসারে মানুষের মৃতু্য ক্যানসারজনিত মৃতু্যর তৃতীয় প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়া 'হেপাটাইটিস বি'জনিত ৫৪ শতাংশ এবং 'হেপাটাইটিস সি'জনিত ৪৬ শতাংশ লিভার ক্যানসার হয়ে থাকে। নীরবে দীর্ঘদিন ধরে লিভারের ক্ষতিসাধনের জন্য লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার ও লিভার ফেইলিউর হয়ে থাকে- এ জন্য এই দুই ভাইরাসকে 'নীরব ঘাতক'ও বলা হয়। ফলে আমরা মনে করি, যখন এই 'নীরব ঘাতক' হেপাটাইটিসে দেশে বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন তা কতটা আশঙ্কাজনক সেটাও অনুধাবন করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। তথ্য অনুযায়ী,'হেপাটাইটিস ই' ভাইরাস গর্ভকালীন অবস্থায় গর্ভবতী মা ও সন্তানের জন্য জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। 'হেপাটাইটিস ডি' সাধারণত 'হেপাটাইটিস বি'-এর সঙ্গে তার প্রদাহ ক্রিয়া করে থাকে। কিন্তু প্রধান উদ্বেগ হচ্ছে হেপাটাইটিস বি ও সি নিয়ে। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের হেপাটাইটিস বি ও সি রয়েছে, হেপাটাইটিস বি ২৯ কোটি ৬০ লাখ এবং হেপাটাইটিস সি পাঁচ কোটি ৮০ লাখ- যার জন্য প্রায় ১১ লাখ মানুষ প্রতি বছর মারা যান। ভাইরাল হেপাটাইটিস মানুষের মৃতু্যর দশম কারণ।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে হেপাটাইটিস সংক্রান্ত যে তথ্যগুলো জানা যাচ্ছে তা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আলোচনায় এসেছে যে- হেপাটাইটিস কী? কীভাবে ছড়ায় বা এর চিকিৎসা কী? এসব বিষয়ে গ্রামের মানুষের কোনো ধারণা নেই। রোগ প্রতিরোধে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ফলে এই বিষয়গুলোও এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।