১. ভয়কে জয় জয় করার মানসিকতা : নানা কারণে নানা সময় মানুষ ভয় পেয়ে থাকে। বিভিন্ন মানুষের ভয়ের কারণ আলাদা আলাদা। একজন ছাত্র পরীক্ষায় খারাপ ফল করার ভয় পায়, একজন ব্যবসায়ী ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার ভয় পান, রাজনীতিবিদ ভোটে হেরে যাওয়ার ভয় পান, সিনেমার তারকা তার ছবি ফ্লপ হওয়ার ভয় পান। মানুষের প্রকৃতিই হলো নানা কারণে ভয় পাওয়া। আর এই ভয়ই মানুষের ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একবার যদি মন থেকে ভয় দূর করে ফেলা যায়, তাহলে কোনো কাজই আর মানুষের জন্য কঠিন নয়। নিজের ভয়কে জয় করতে হলে অলস বসে থাকা যাবে না।
২. বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা : বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান অর্জন করে। বই পড়ার গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। আত্মউন্নয়নের জন্য বই পড়া জরুরি। বই পড়াকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে গড়ে তুলা উচিত। নিজেদের আত্মউন্নয়নের জন্য নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। গতানুগতিক বইয়ের পাশাপাশি নিজের আত্মউন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের বই পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মউন্নয়ন বই পড়লে একজন ব্যক্তির চলাফেরা, আচার-আচরণ উন্নত করা সম্ভব। আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়ে মানসিক হীনমন্যতা, বিষণ্নতা ও বদঅভ্যাস ত্যাগ করে সুন্দর জীবন গঠন করে অধিকতর সাফল্য অর্জন করা যায়। নতুন কিছু শিখতে বা জানতে গেলে পড়াশোনার বিকল্প কিছু হয় না। পড়াশোনা মানে শুধু যে বই খুলে বসে পড়া এমনটা নয়, যেটুকু সময় পড়বেন সেটুকু সময় পড়ার মতো করেই পড়তে হবে। পৃথিবীতে বিখ্যাত ব্যক্তিরা নিয়মিত বই পড়তেন।
৩. নতুন নতুন বিষয়ে জানার চেষ্টা করা : মনে একটু উৎসাহ আর সচেতনতা থাকলেই প্রতিদিন নতুন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে প্রতিদিন আশপাশে ও পৃথিবীতে কী ঘটছে সেটার বিষয়ে অবগত থাকা উত্তম। এজন্য রোজ খবরের কাগজ পড়া বা ইউটিউবে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিডিও দেখা ভালো। খবর পড়তে পড়তে দেখা যায় অনেক নতুন জিনিস উঠে আসছে, যেগুলোর ব্যাপারে আগে থেকে জানা থাকে না। যদি একদিন কিছু পড়তে ভালো নাই লাগে, তাহলে নতুন গান শুনুন, কবিতা শুনুন। শুনতে শুনতে শিখে ফেলুন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, যত পরিশ্রম করবেন ততই জ্ঞান চক্রবৃদ্ধি সুদ আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং এর ফল হাতেনাতেই পাওয়া যাবে- যখন সময় ভালো চলবে।
৪. খোলা মনে কথা বলা : নমনীয় এবং খোলা মনের হওয়া ভালো। অনমনীয় মনোভাবের মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেট করা কঠিন ও অস্বস্তিকর। আরেকজনকে বোঝার চেষ্টা, পুরোপুরি বিপরীত মত দেখেও হুট করে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেটা নিয়ে ভাবা ভালো অভ্যাস। এটা আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াবে, সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবে, জ্ঞান বাড়াবে, সর্বোপরি নিজের ব্যক্তিত্ব মজবুত করবে। এসব ক্ষেত্রে সৎ থাকুন। নিজের জানায় বা ধারণায় ভুল খুঁজে পেলে সংশোধন করে ফেলতে হবে। আখেরে নিজেরই লাভ বেশি। খোলা মনের মানুষ হতে গেলে প্রচুর সময় দিতে হবে মানুষের সঙ্গে। ছোট-বড় সবার সঙ্গে মেশার কৌশলগুলো রপ্ত করতে হবে। যদিও সবার মন-মানসিকতা সমান হয় না; কিন্তু সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলার চেষ্টা করা উত্তম।
৫. যোগাযোগ বা নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে তোলা : নেটওয়ার্কিং, কোলাবরেশন ও যোগাযোগ নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা এবং নতুন সুযোগ তৈরি করে। নেটওয়ার্ক উলেস্নখযোগ্যভাবে যে কোনো ব্যক্তির সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারে। নিজেকে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে রাখতে হবে যারা সবকিছুতেই অনুপ্রাণিত করতে পারে, সমর্থন করে এবং চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন লোকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, নতুন ধারণা শিখতে পারা যায় এবং বুঝতে পারা যায় কিভাবে যোগাযোগ করতে হয় এবং কিভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা করা যায় এবং এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যা ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হতে পারে। বিভিন্ন ইন্টারেস্ট গ্রম্নপের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অথবা আগ্রহের বিষয়গুলোর সংক্রান্ত বিভিন্ন কনফারেন্স এবং ইভেন্টগুলোতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং বাড়ে।
৬. নিজ পেশা সম্পর্কিত জার্নাল রাখা ও পড়া : প্রতিটি মানুষ তার পেশায় সাফল্যের রহস্য জানতে চায়। সব সফল মানুষের তেমন কোনো গোপনীয়তা নেই। তবে তাদের থাকে একটি পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কোন কোন সরঞ্জাম প্রয়োজন তা জানার সঙ্গে সঙ্গে সঠিকভাবে প্রয়োগিক ক্ষমতা। নিজ পেশা সম্পর্কিত জার্নালগুলোয় এ ধরনের অনেক অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, প্রতিবন্ধকতা, উত্তরণের উপায়, সফলতার বাস্তব বিষয়গুলো জানা যায়। যা কর্মজীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। সেখানে নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা, লেখা বা প্রাসঙ্গিক অনেক কিছু শেয়ার করা যায়। তাই দৈনিক বা সাপ্তাহিক বা অন্তত মাসিক একটা জার্নাল হলেও রাখা প্রয়োজন। স্বীয় লক্ষ্য ও অগ্রগতি নির্ধারণ এবং তা মূল্যায়ন করতে জার্নালগুলো সহায়ক হতে পারে।
৭. যোগ্য মেন্টর বা পরামর্শদাতা নির্বাচন : একজন পরামর্শদাতা তার জুনিয়রকে এমন সব চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করবে, যেগুলোর কথা হয়তো আগে থেকে জানা যায়নি। যে ব্যক্তি বেশি সফল সে অবশ্যই সফল ব্যক্তিদের চেনে, যারা প্রয়োজনে এগিয়ে আসবে। একজন মেন্টরের সাধারণত বলার মতো একটি নেটওয়ার্ক থাকে, যেটি ব্যবহার করে সে অন্যকে সাহায্য করতে পারবে। মেন্টররা জানেন এবং বুঝতে পারেন, কে বা কী একজন মানুষের ক্যারিয়ারকে লাইনচু্যত করতে পারে। সেসবের কাছ থেকে রক্ষা করার উপায় বের করে দেয় মেন্টর। অনেক কাজই আছে যেগুলো প্রচারযোগ্য না, অনেক কাজই আছে যেগুলো ক্যারিয়ারে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। সেগুলো থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে একজন পরামর্শদাতা। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে জটিল চরিত্রদের কীভাবে সামলাতে হয় সেটাও শিখিয়ে দেবেন মেন্টর।
এটিএম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ
ঢাকা