রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এমন তথ্য সামনে এসেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। ফলে, বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে নতুন অর্থবছরে বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা আমলে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য, এনবিআরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ১২.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে সর্বমোট ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘাটতি হয়। এছাড়া জানা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। ওই অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে যেখানে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। প্রসঙ্গত এটাও উলেস্নখ্য যে, এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, বিগত অর্থবছরে সব মিলিয়ে তিন লাখ ৭১ হাজার ৮৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়। এর মধ্যে এনবিআর আমদানি পর্যায় থেকে এক লাখ ৩৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ভ্যাটে এক লাখ ৪০ হাজার ৪৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং আয়কর থেকে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫ কোটি ২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৫.৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, ভ্যাটে ১১.৯৭ শতাংশ এবং আমদানি পর্যায়ে ৮.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত আমরা উলেস্নখ করতে চাই, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ ছিল রাজস্ব আয় বাড়ানোর। এছাড়া নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও একইভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চাপ রয়েছে। অন্যদিকে করছাড় কমানোর শর্তও রয়েছে বলে জানা যায়। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। জানা যাচ্ছে যে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে- যা জিডিপির ৯.৭ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, আর অন্যান্য উৎস থেকে ৬১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরেও এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে।
লক্ষণীয়, এটাও জানা গেছে যে, গত অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ছিল। সে কারণে বড় একটা নেতিবাচক প্রভাব ছিল পুরো বছরজুড়ে। তারপরও সামগ্রিক রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে, চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটা আরও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে- এমন আলোচনাও উঠে আসছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এটা যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনিভাবে চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে- এমন আলোচনা যখন উঠে আসছে, তখন এটাও আমলে নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।