রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

অর্থনীতির চাকা সচল করতে হবে

  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অর্থনীতির চাকা সচল করতে হবে

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল জুলাই মাসের শুরু থেকেই। তবে শুরুতে তা শান্তিপূর্ণই ছিল। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে, যখন আন্দোলনকারীরা 'বাংলা বস্নকেড' নামে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। আর মাসের মাঝামাঝি সেই আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে প্রায় অচল হয়ে পড়ে দেশ, শুরু হয় নজিরবিহীন নৈরাজ্য। তাতে অর্থনীতির চাকাও থমকে যায়।

আন্তর্জাতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি আর ডলারের দরের দাপটে এমনিতেই চাপে ছিল দেশের অর্থনীতি, তার মধ্যে এল কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নজিরবিহীন এক নৈরাজ্যের আঘাত। তাতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, কীভাবে তা সামলে উঠবে দেশ? তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও উৎপাদকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, বন্দর কার্যক্রম এবং কারখানা বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রতিদিনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার মতো। এর চেয়েও বড় ক্ষতি হচ্ছে, আমাদের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতায় ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পুরো সময়টায় ব্যাংক ও আর্থিক খাত ছিল প্রায় অচল; রেমিট্যান্স আসা বন্ধ থাকায় অর্থনীতির শ্বাসবায়ুর জোগান পড়েছে হুমকিতে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক খাত, শুল্কায়ন, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যোগাযোগ থেকে শুরু করে সাধারণের জীবনে বড় প্রভাব পড়েছে।

গত অর্থবছর শেষ হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। গত এক সপ্তাহের অস্থিরতায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বছর তিনেক ধরেই নানা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সংকট, রাজস্ব ঘাটতিতে ঋণ নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি, ঋণের সুদ পরিশোধের দায় ও বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ে ভাটা রয়েছে তালিকার ওপরের দিকে।

দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিকতায় ফেরাতে অন্য উদ্যোগের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। কারণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা এসেছে। সেজন্য উৎপাদন ও বাণিজ্য কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে হবে স্বাভাবিক অবস্থায়।

মনে রাখতে হবে, আস্থা যতদ্রম্নত নামে, ততদ্রম্নত ওঠে না। আন্দোলন-সহিংসতায় থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকায় ফের গতি আনতে অর্থনীতিবিদরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আস্থার পুনর্বাসনের পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক সেবা-পরিষেবা ফের স্বাভাবিক করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেননা অর্থ ছাড়ের হিসাবে গড়বড় হলে মূল্যস্ফীতি, ঋণের বোঝা আরও বাড়বে, তাতে সামষ্টিক অর্থনীতি আরও বেশি চাপে পড়বে। ভুলে গেলে চলবে না, দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে শিল্প উৎপাদনের চাকা পুরোপুরি থেমে যায়, প্রতিদিন বাড়তে থাকে অর্থনীতির ক্ষতির অংক। এ ঘটনা থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। অনেক কিছু শেখার আছে সরকারের জন্য, ছাত্রদের জন্য ও অন্য রাজনৈতিক দলের জন্য। যেহেতু দেশে অর্থনীতির নানা সংকট রয়েছে, সেহেতু সরকারকে প্রকল্প নেওয়া ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে। সেজন্য দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখাও জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে