রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

বেড়ে যাচ্ছে সেচ খরচ কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করুন

  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বেড়ে যাচ্ছে সেচ খরচ কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করুন

কৃষকের যদি উৎপাদন করতে খরচ বেড়ে যায় তবে তা উদ্বেগের। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, পানির দুষ্প্রাপ্যতায় বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের সেচ খরচ। যা আমলে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তথ্যমতে, দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে প্রকল্প) আওতাধীন সেচ কাজে প্রতি একরে ২০ হাজার টাকা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষকের। জানা যাচ্ছে, এক কেজি ধান উৎপাদনে ব্যয় হয় প্রায় দেড় হাজার লিটার পানি। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় বছরই মৌসুমে বৃষ্টির পানি পাওয়া যায় না। খরায় চৌচির হয় ফসলের ক্ষেত। এ ছাড়া ভূগর্ভের পানির অধিক ব্যবহারে ভূমিধস ও মাটি দেবে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।

খবরে এটাও উঠে এসেছে, বিএডিসি'র ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের হিসাবে আগামী ১০ বছরে ব্যয় তিনগুণ বাড়বে। জানা যায়, এক দশক আগেও প্রতি হেক্টর জমি চাষে সেচের খরচ ছিল চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু গত কয়েকটি মৌসুমে তা ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আর শুধু তাই নয়, পানির স্তর এক ফুট নিচে নামলে কৃষিতে বছরে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয় ৯০ কোটি টাকা। কেননা এক ফুট নিচে নামলে পানি উপরে ওঠাতে বেশি শক্তিশালী হর্স পাওয়ার পাম্প দিয়ে পানি তুলতে হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ আবশ্যক।

এ কথাও বলা দরকার, বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় সাব-মার্সেবল পাম্প বসিয়ে ফসলের ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে সেচ খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া লক্ষণীয়, খাবার পানি, রান্না, গোসল, সেচসহ সব কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নিভর্রশীল বাংলাদেশ। সুপেয় ও চাষাবাদের পানির চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে। ১৯৬৮ সালে যখন বাংলাদেশে ডিপ টিউবওয়েল বসানো শুরু হয়, তখন সর্বোচ্চ ৫০ ফুট নিচে টিউবওয়েল বসিয়েই পানি পাওয়া যেত। এখন ১৬০ ফুট বসিয়েও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না- যা উৎকণ্ঠাজনক। লক্ষনীয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ভূগর্ভের পানির স্তর দুই থেকে পাঁচ মিটার করে নিচে নামছে। এতে পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভূমিধস ও মাটি দেবে যাওয়াসহ নানা দুর্ঘটনার। অন্যদিকে বিএডিসির গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপে দেখা যায়, দেশের মধ্যভাগ ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তৃত ৪৮ জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ও খাবার পানি সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে সেচের খরচে শীর্ষে এখন বাংলাদেশ। গত কয়েক বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলের তিন জেলায় প্রায় সাত হাজার ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না মেনেই এসব ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়। যার ফলে পানির স্তর প্রায় ৩৭ ফুট নিচে নেমে গেছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কৃষকের সেচ খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নানা ধরনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যা এড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সামগ্রিকভাবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আমলে নেওয়া যেমন অপরিহার্য, তেমনি এটাও এড়ানো যাবে না যে, এই আলোচনা উঠে আসছে- জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে পানি সমস্যা বাড়বে। ফলে এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। পানির অধিকারে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও কৃষি উৎপাদনকে প্রাধান্য দিতে হবে। ভূগর্ভের পানি মজুত রাখতে উপরিভাগের পানির ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত না করলে পানি নিয়ে বড় বিপদ খুব সন্নিকটে এমন আশঙ্কার কথাও উঠে আসছে। সঙ্গত কারণেই যথাযথ পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে