রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

নেপালে আবারও বিমান দুর্ঘটনা সঠিক তদন্ত জরুরি

  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নেপালে আবারও বিমান দুর্ঘটনা সঠিক তদন্ত জরুরি

নেপালের সুরিয়া এয়ারলাইন্সের কাঠমান্ডু থেকে পোখারাগামী একটি বিমান ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভেঙে পড়েছে। এতে ১৮ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছে। বেঁচে গেছেন মাত্র একজন পাইলট। বিমানটিতে দুজন ক্রু এবং ১৭ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানটি 'বার্ষিক মেনটেন্স কর্মসূচি'র কাজ নিয়ে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাচ্ছিল। সুরিয়া এয়ারলাইন্সের ছোট একটি বিমান উড্ডয়নের সময় রানওয়েতে স্কিড করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। সুরিয়া এয়ারলাইন্স মূলত নেপালের অভ্যন্তরীণ সেক্টরে বিমান পরিষেবা দিয়ে থাকে।

আকাশপথে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথ হিসেবে ধরা হয় নেপালের আকাশকে। পাহাড়ঘেরা আকাশপথ, খারাপ আবহাওয়া এ অঞ্চলকে সব সময় বিপদের মুখে দাঁড় করিয়ে রাখে। নেপালে বছরে অন্তত একটি করে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১৯৬২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৭৩টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে নেপালে। মৃতু্য হয়েছে ৯৫০ জনেরও বেশি মানুষের। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ছিল ১৯৯২ সালে- যখন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি এয়ারবাস কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১৬৭ জন যাত্রী। এ ছাড়াও ২০২৩-এর জানুয়ারিতে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৭২ জন প্রাণ হারান। এতগুলো দুর্ঘটনার বেশিরভাগই নেপালের দেশীয় বিমান সংস্থার। একই বিমান সংস্থার বিমান বারবার ভেঙে পড়ার পরও সে দেশের সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯১ সালের পর নেপালে বেসরকারি বিমান সংস্থার দরজা খুলে দেওয়া হয়। এতে নেপালের পর্যটন ও যাতায়াতে উন্নতি হয় ঠিকই, কিন্তু বাড়তে থাকে বিপদ। এতগুলো বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নিরাপত্তার গাফিলতিকেই দায়ী করে এসেছে বিশ্বের নিয়ামক সংস্থাগুলো। পাশাপাশি চালকের অভিজ্ঞতার অভাব ও বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকেও দায়ী করা হয়। তবে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টিকে দায়ী করা হয় তা হলো- দেশটির দুর্গম পাহাড়ি ভূখন্ড এবং প্রতিকূল আবহাওয়া। এছাড়া নেপালের বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো বহু পুরনো। অন্য দেশে বাতিল করে দেওয়া বিমান কিনে এনে সেখানে ব্যবসা করছে বলেও আগে অভিযোগ উঠেছে। এই বিমানবন্দরে ২০০৮ ও ২০১৯ সালসহ গত বছরগুলোয় একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। আকাশপথে এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে পুরনো উড়োজাহাজ পরিচালনা। পাশাপাশি দুর্ঘটনার পর সঠিকভাবে তদন্ত না হওয়া। তদন্ত করে কারও গাফিলতি পেলে দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ আছে। এসব কারণে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নেপালের সব বিমান সংস্থাকেই ব্যান্ড করে। তারপরও পরিস্থিতির বদল হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে বিমানযাত্রা।

নিরাপদ উড্ডয়নের উদ্বেগ নিরসনে দুই বছর পর আইসিএও এবং নেপাল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার ঘোষণা দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিরাপদ উড্ডয়নের মানদন্ডে উন্নতি করেছে দেশটি। আমরা আশা করছি, এবার তদন্ত করে কারও গাফিলতি পেলে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে