ব্যাংকিং খাতে ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:১৮
অনলাইন ডেস্ক
যতই দিন যাচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ বাড়ছে। এই ঋণের প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকা। তবে পুনঃতফসিলিকরণ বিবেচনায় নিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যে আরও অনেক বেশি হবে, তা বলাই বাহুল্য। স্বেচ্ছায় না বাধ্য হয়ে ঋণখেলাপির তকমা পেল, তা আপাতত বিবেচ্য বিষয় নয়; বিষয়টি হচ্ছে, জনগণের গচ্ছিত সঞ্চিত অর্থ ফেরত আসছে না, ক্রমেই খেলাপির পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী। এমন অভিযোগ আছে, যারা লুট করেছেন, তাদের অধিকাংশই সমাজের অভিজাত শ্রেণি, রাজনৈতিক শক্তিধর, দেশের প্রচলিত আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিজাত এলাকায় তাদের বাস, বিদেশি বেশভূষায় তারা বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে বেড়ান। এক কথায় তাদের শিল্পকারখানা তথাকথিত রুগ্ণ; কিন্তু তারা বেশ সুস্থ ও সবল।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ব্যাংকিং ব্যবস্থার অধীন সরকারি ও বেসরকারি খাতে যাওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পাঁচ বছর আগের তুলনায় ঋণ বেড়েছে সাত লাখ কোটি টাকা। তবে শুধু ঋণ নয়, পালস্না দিয়ে বেড়েছে আমানতও। ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা। পাঁচ বছর আগের তুলনায় ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, দেশে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। সমীক্ষা প্রতিবেদনটি ৬ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে আমানতের তথ্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ঋণের তথ্য ২০২৪ সালের ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত উলেস্নখ করা হয়েছে। সাধারণভাবে আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হতে পারে না। তবে ব্যাংকের আমানতের বাইরেও সরকার অনেক সময় টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেয়। এ অঙ্ক আমানতের বাইরে থাকে। সে ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ বেশি হতে পারে।
ঋণ বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, বিনিয়োগের হিসাবকে ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিনিয়োগ মূলত এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকে যে টাকা ধার দেয় সেটা, আবার এই টাকা সরকারি খাতে ধার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে বিনিয়োগের টাকা প্রকৃত ঋণ নয়।
সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকা আমানত বাড়ছে। কিন্তু ঋণ বাড়ছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা করে। এদিকে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এসেছে স্থায়ী হিসাবে (এফডিআর)। আর ঋণের এক-চতুর্থাংশ গেছে সরকারের কাছে। ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে ঋণ যা দেওয়া হয়, তা অনেক সময় ফেরত আসে না। অথচ ব্যাংকগুলোকে হিসাবটা ঠিকই দেখাতে হয়। এতে ঋণের স্থিতির অঙ্কটা বড় হয়ে যায়।
দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপি ও নানা অনিয়মের কারণে বেশকিছু ব্যাংক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এসব ব্যাংক বাছবিচার ছাড়াই বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না অন্তত ব্যাংক খাতে। ঋণের প্রবৃদ্ধি, ঋণখেলাপি যেন একটা সংস্কৃতির মতো ধারণ করা, যেন কেউ বারণ করবে না। একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতিই পারে সমস্যার সমাধান দিতে।