রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

পানিতে ডুবে মৃতু্য শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

  ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
পানিতে ডুবে মৃতু্য শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

বিভিন্ন সময়ে পানিতে ডুবে শিশুদের মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালে এমন খবর অহরহ দেখা যায়। আর যখন এমনটি জানা যাচ্ছে যে, পানিতে ডুবে শিশুমৃতু্যর তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম- তখন পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ২০২৩ সালে দেশে পানিতে ডুবে প্রায় ৫শ জনের মৃতু্য হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, পানিতে ডুবে মৃতু্যর ৯৯ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সি। এছাড়া উলেস্নখ্য, গত বছরের একই সময় মৃতু্য হয়েছিল ৫৭৭ জনের। সঙ্গত কারণেই যে তথ্য আসছে তা ভীতিপ্রদ- যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

আমলে নেওয়া জরুরি যে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ শিশু সাঁতার শেখার সুযোগ পায় না। বিশেষ করে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের বাসিন্দা। ফলে পানিতে ডুবে মৃতু্য বাড়ছে। এ ছাড়া অভিভাবকদের অসচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ না থাকাও এ ধরনের মৃতু্যর জন্য দায়ী- এমনটি সামনে আসছে। আমরা মনে করি, যেভাবে পানিতে ডুবে মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে এবং ৯৯ শতাংশই ১৮ সবছরের কম বয়সি, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

উলেস্নখ্য, গেস্নাবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান 'সমষ্টি'-এর একটি গবেষণার তথ্যানুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত আড়াই বছরে মোট দুই হাজার ৮০৫ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রস্তাবে ২০২১ সাল থেকে প্রতি বছর ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্তও নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি যে, পানিতে ডুবে শিশুমৃতু্যর একটি বড় কারণ বলা হয় সরকারের তেমন উদ্যোগ না থাকা। যদিও এ মৃতু্য রোধে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পও তৈরি করেছে। আরও জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সমাজভিত্তিক শিশু যত্নকেন্দ্র স্থাপন এবং শিশুদের সাঁতার শেখানোসহ অভিভাবকদের সচেতন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে- যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা মনে করি, প্রকল্পর যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, যেভাবে পানিতে ডুবে শিশুমৃতু্যর তথ্য আসছে, তা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। জাতিসংঘের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের রেজুলেশনে পানিতে ডুবে মৃতু্যকে 'নীরব মহামারি' হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যেখানে জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের রেজুলেশন এটিই প্রথম। উলেস্নখ্য, নীরব এই বৈশ্বিক মহামারির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক পস্ন্যাটফর্মে নিয়ে আসতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন গত ২০১৮ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি রেজুলেশনটিতে সহনেতৃত্ব দেয় আয়ারল্যান্ডসহ ৮১টি দেশ। জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে মৃতু্য বিশ্বের প্রতিটি জাতিরই ক্ষতি করছে। অগ্রহণযোগ্য উচ্চহারের এই মৃতু্য প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে একটি কর্মকাঠামোও তুলে ধরা হয়েছে এ প্রস্তাবে। আমরা মনে করি, কর্মকাঠামো আমলে নেওয়া এবং পানিতে ডুবে মৃতু্যর যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা বিবেচনায় রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য।

সর্বোপরি বলতে চাই, এমন বিষয়ও এর আগে খবরে উঠে এসেছে যে, পরিবারের অসচেতনতা শিশুদের পানিতে ডুবে মৃতু্যর বড় কারণ। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা দরকার, সাঁতার না জানার কারণে অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এমনকি শুধু শিশুরাই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদেরও পানিতে ডুবে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই সাঁতার শেখার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এ কথা মনে রাখা দরকার, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে, তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে দেশ। সঙ্গত কারণেই শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পানিতে ডুবে মৃতু্যর মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অভিভাবক তথা সবারই দায়িত্ব আছে, সেটিও মনে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে