কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা। এর প্রভাব পড়েছে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যে। এ কারণে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে যেমন ভাটা পড়েছে, একইভাবে ভাটা পড়েছে বিদেশি বাণিজ্যেও। বিশেষ করে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশ। ইন্টারনেট না থাকায় থমকে গেছে দেশের অর্থনীতির চাকা এবং তাবৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা। অচল হয়ে পড়ছে দেশের সব ব্যাংকের অ্যাপভিত্তিক ও অনলাইন লেনদেন, ব্যাংক-বীমা সেবা, মোবাইল ব্যাংকিং, গ্যাস-বিদু্যতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ, কল সেন্টার, সরকারের নিয়মিত ডিজিটাল সার্ভিস, ইন্টারনেটভিত্তিক বৈদেশিক বাণিজ্য, ফ্রিল্যান্সিং, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও আকাশ পথের টিকিট বিক্রি। ইন্টারনেট না থাকায় ব্যাংকের বুথগুলো থেকে টাকা ওঠাতে পারছেন না গ্রাহকরা। কিছু ব্যাংকের বুথে টাকা তোলা গেলেও হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় চেক দিয়েও জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা। ফলে নগদ টাকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রপ্তানি আদেশ ভিন্ন দেশে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামতে পারে। তাই পরিস্থিতি দ্রম্নত স্বাভাবিক হওয়া দরকার বলে মত ব্যবসায়ীদের। পুরো দেশ ইন্টারনেটবিহীন থাকায় প্রযুক্তির বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও নেমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, পুরো ডিজিটাল কাঠামো আগুনে পুড়েছে, ঠিক করার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে। ইন্টারনেটের সরবরাহ ছাড়া ব্যাংকিং খাত এভাবে চলতে পারে না। অনেক ব্যাংকের অবকাঠামো ডিজিটাল সফটওয়্যারের ওপর নির্মিত। ফলে তাদের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যাংক খাত। এটা সত্য ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা বিদেশি ক্রেতার সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না। অন্যদিকে, এই অবস্থায় দেশীয় উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিপাকে পড়েছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও। সবার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইন্টারনেট দ্রম্নত সচল না হলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, এমন ধারণা ব্যবসায়ীদের। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিগত কয়েকদিন যাবত কোটাবিরোধী আন্দোলনে দেশের অর্থনীতিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে, দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানকে আরও সংকুচিত করবে। যে করেই হোক, দেশকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। সচল করতে হবে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও তৎপরতা।