পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রোধে পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পাহাড় ধসে প্রতি বছর মৃতু্যর ঘটনা বাড়ছে। অথচ জানা যাচ্ছে যে, মৃতু্যর ঘটনা বাড়লেও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নেওয়া জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরও ৯ জনের প্রাণহানির তথ্য রয়েছে। অন্যদিকে, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে- প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পরও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে জনবসতি সরানো যাচ্ছে না। আমরা বলতে চাই, একদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা থেমে নেই। অন্যদিকে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থামানো যাচ্ছে না- ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক সেটি আমলে নেওয়া অপরিহার্য। একইসঙ্গে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। লক্ষণীয় যে, বিশ্লেষকরা বলছেন- অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে পাহাড় উদ্ধারে ব্যর্থতা ও জনগণের অসচেতনতার কারণে প্রতি বছর মৃতু্যর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং দখলদারদের কবল থেকে পাহাড় উদ্ধার ও জনসচেতনতা তৈরিতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে এটাও জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে লাখ লাখ মানুষ অবৈধভাবে ঘর তুলে বসবাস করছেন। এছাড়া কক্সবাজারের সুউচ্চ পাহাড়গুলো বৃক্ষশূন্য করে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে ঘর। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া এমন অভিযোগও রয়েছে যে, প্রভাবশালীরা পাহাড়গুলো দখল করে এর পাদদেশে ও চূড়ায় অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলছেন। ভাড়া ও দখলস্বত্ব কেনাবেচার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। আমরা বলতে চাই, পাহাড়ধস এবং প্রাণহানির ঘটনা আমলে নিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একদিকে অতিবর্ষণে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলে মৃতু্যর মিছিল বেড়েই চলছে। অন্যদিকে, নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে- এটাও এর আগে আলোচনায় এসেছে। এছাড়া স্মর্তব্য যে, পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। কিন্তু পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। সঙ্গত কারণেই জলবায়ুর প্রভাব, নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের মতো বিষয়, দখলদারিত্বসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই- বিশেষজ্ঞরা জানান, পাহাড়ের ভূ-প্রকৃতির গঠন হলো বালি আর কাদামাটির মিশ্রণে। পাহাড়ের উপরিভাগে মোটা দানার বালির বিশাল স্তর, তার নিম্নভাগে রয়েছে কাদামাটির স্তর। এভাবে একের পর এক কাদামাটি ও বালির স্তরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলোতে ভূমিক্ষয়ের ফলে ফাটল সৃষ্টি হয়। আর ভারী বৃষ্টিতে মাটি-বালির স্তর নরম হয়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধনও পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ বলেও জানান। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি বলতে চাই, পাহাড় ধসে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। লাশের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। অন্যদিকে, এটাও আমলে নিতে হবে যে, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। সঙ্গত কারণেই পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। জলবায়ুর প্রভাব আমলে নিয়ে উদ্যোগী হওয়া এবং বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা, পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার মতো ঘটনা রোধ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।