পবিত্র আশুরা অন্তর আলোকিত হোক
প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
আজ পবিত্র আশুরা। আশুরা ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের পরিভাষায় আশুরা বলতে মহরম মাসের ১০ তারিখকে বোঝায়। মহরম ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। এই দিনে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালায় মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণ করেন। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি একদিকে যেমন শোকের, তেমনি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেতনায় উজ্জ্বল।
প্রসঙ্গত, আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিছিল ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পবিত্র আশুরা উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আর এই মিছিল নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বলস্নম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই আদেশ তাজিয়া মিছিল শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ফলে, এই নির্দেশনা মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হবে এমনটি কাম্য। এছাড়া জানা গেছে, আশুরা উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে যারা আসবে প্রত্যেককে চেকিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হবে। হোসেনি দালানের আশপাশের উঁচু ভবনের ছাদে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মধারী পুলিশ থেকে অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তাজিয়া মিছিলের সামনে-পেছনে পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে। এছাড়া সমগ্র অনুষ্ঠানস্থল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রাখার পাশাপাশি সাইবার প্যাট্রলিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানা যায়।
উলেস্নখ্য, ইসলামের ইতিহাসে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনার পাশাপাশি এ দিনে নানারকম তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছে। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথীসহ হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত বরণের এ মর্মান্তিক ঘটনা ছাড়াও জানা যায়- এই দিনে আদি মানব হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং এই দিনই তার তওবা কবুল হয়। এই ১০ মহরম তারিখে হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপস্নাবন থেকে রক্ষা পায়। এর বাইরেও এই মহিমাময় দিনে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার উলেস্নখ রয়েছে ইসলামের ইতিহাসে। তবে ইসলামের ইতিহাসে ১০ মহরম তারিখটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও এর তাৎপর্য থাকলেও কারবালায় ঘটে যাওয়া সর্বশেষ হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণেই বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালন করে থাকেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুয়াবিয়ার মৃতু্যর পর তার ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এজন্য ষড়যন্ত্র ও শক্তি ব্যবহারের পথ বেছে নেয়। ফলে, চক্রান্তের অংশ হিসেবে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। জানা যায়, একই চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাতবরণ করেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। আর তাদের হত্যার ক্ষেত্রে যে নিষ্ঠুর পথ বেছে নেওয়া হয়েছিল তা ইতিহাসে বিরল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। অন্যায়, অসত্য ও শোষণের বিরুদ্ধে কারবালার প্রান্তরে এই বিয়োগান্ত ঘটনাকে মুসলিম বিশ্ব প্রতি বছর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে। নিজেদের ইমানি শক্তিকে স্রষ্টার পরম সান্নিধ্য লাভের জন্য উজ্জীবিত করে তোলে। বর্তমান বিশ্বের জন্যও আশুরার শিক্ষা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ত্যাগের যে শিক্ষা কারবালার ঘটনা মানব জাতিকে দিয়েছে, তা আজকের দুনিয়ার সব অন্যায় দূর করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, পবিত্র আশুরার শিক্ষাকে সামনে রেখে শোক পরিণত হোক শক্তিতে এবং এই দিনটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ও সত্য প্রতিষ্ঠার যে শিক্ষা দেয়, তা মনকে শুদ্ধ করুক। পবিত্র আশুরা পালন করার ক্ষেত্রে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হোক। কারবালার ত্যাগের মহিমায় সবার অন্তর আলোকিত ও শুদ্ধ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।