দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক- এই আলোচনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি এটা সামনে আসছে যে, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ আর কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ'র) ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক প্রোগ্রামে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
আমরা বলতে চাই, কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে- এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কতটা উদ্বেগজনক সেটি আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু কতটা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল সেটিও অনুধাবন করা জরুরি। যখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে- তখন তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। উলেস্নখ্য, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংগঠন কিছু সুপারিশও জানিয়েছে- মশা নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করাতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনসাধারণকে যুক্ত করতে হবে। মশা নির্মূলে রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ, জিনগত নিয়ন্ত্রণ এবং জৈব নিয়ন্ত্রণ বা বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোলের যুগপৎ এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রয়োগ করাসহ যে সুপারিশগুলো করেছে সেগুলো সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।
আমরা এটাও বলতে চাই, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে ডেঙ্গু রোধে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি এক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম রোধ এবং জনসচেতনতার বিষয়টি গুরুত্বপূণ। স্মর্তব্য যে, এডিসবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি পায় সেখানে যেমন ধ্বংস করা দরকার, এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকর উদ্যোগও জরুরি। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব কমবে না। এর আগে এমন আলোচনা উঠে এসেছে- বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে বিভিন্ন জায়গায় এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে। উলেস্নখ্য, যেহেতু এডিস মশা সংক্রমিত মশা। এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই সংশ্লিষ্টদের সার্বিক বিষয় আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, এর আগে এটা আলোচনায় এসেছিল যে, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ঢাকার হাসপাতালগুলোতে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। অন্যদিকে, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আশঙ্কাজনক অন্য রোগের চিকিৎসা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা উঠে এসেছিল। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি অন্য জটিল রোগসহ স্বাভাবিক চিকিৎসার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিন। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নেরও কোনো বিকল্প নেই। ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং যে সুপারিশগুলো উঠে এসেছে তা বিবেচনায় রেখে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।