শিক্ষার্থী নিহত সড়ক নিরাপদ করতে হবে

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে আর সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার যে চিত্র সামনে এলো তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত সাড়ে পাঁচ বছরে নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯১৬ শিক্ষার্থী। এই সময় দিনে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন সড়কে। এছাড়া চলতি বছরের গত ৬ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১১ শিক্ষার্থীর মৃতু্য হয়েছে বলেও জানা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার রাজধানীর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত 'সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত : পরিসংখ্যান ও পর্যালোচনা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। তথ্য মতে, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গবেষণাটি করেছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩৪ হাজার ৪৭৮ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫০ শতাংশই মারা গেছেন মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায়। আর আঞ্চলিক সড়কগুলোতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। তথ্য অনুযায়ী, ৫-১৭ বছর বয়সি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে দুই হাজার ৬৪১ জন। আর ১৮-২৫ বছর বয়সি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৯৭৮ জন। অন্যদিকে, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুযায়ী, মোটর সাইকেলের চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৭৮৩ শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনায় নিহত মোট শিক্ষার্থীর এটি প্রায় অর্ধেক। আর শিক্ষার্থীরা পথচারী হিসেবে যানবাহনের চাপা বা ধাক্কায় নিহত হয়েছেন এক হাজার ৫৩৪ জন। যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৭২১ জন। আবার বাইসাইকেল আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছেন ৪৯৭ জন। অটোরিকশার চাকায় ওড়না বা পোশাক পেঁচিয়ে মৃতু্য হয়েছে ৮৪ জনের মতো। আমরা বলতে চাই, সড়কে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার যে চিত্র উঠে আসছে, তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং এর ভয়াবহতা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। প্রসঙ্গত, গবেষণায় সড়কে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার কয়েকটি কারণ উলেস্নখ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ত্রম্নটিপূর্ণ সড়ক, অনিরাপদ যানবাহন, নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে জ্ঞানের অভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর মানসিকতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা এবং অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। আমরা মনে করি, এই কারণগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবেদনে তাদের মন্তব্য তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। যেখানে দেশের নৈরাজ্যকর সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত টেকসই পরিবহণ কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়ক পরিবহণ আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরিসহ নানা বিষয় তুলে ধরেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি। সর্বোপরি বলতে চাই, সড়ক দুর্ঘটনায় গত সাড়ে পাঁচ বছরে নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯১৬ শিক্ষার্থী। এই সময় দিনে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন সড়কে- যা এড়ানো যাবে না। সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃতু্য কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো যেমন আমলে নিতে হবে; তেমনিভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ- ফলে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিয়ে দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।