কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। এক অর্থবছরেই পেঁয়াজ, চাল, রসুন, আলু ও এলাচ এই পাঁচ পণ্যের দাম সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়াও বেড়েছে অন্যান্য পণ্যের মূল্য। কোনো পণ্যের দামই কমার দিকে নেই। পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। চাল প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। আলুর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বেগুন, বরবটি ১০০ টাকার ওপরে কেজি। টমেটোর কেজি ২০০ টাকা। বাজারে পেঁয়াজ খুচরায় ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশে। তবে বিভিন্ন অলিগলিতে বা মুদি দোকান থেকে ক্রেতাদের এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি চলছে। টানা বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের দাম ঠেকেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। দাম যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। খাদ্যপণ্যের এই উচ্চমূল্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকার এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দাম বেঁধে দিয়ে এবং শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যে কাজে আসেনি, তা খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিই বলে দেয়।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, দেশের ১৮ জেলায় এ সময়ে বন্যা হচ্ছে। এছাড়া, সারাদেশে বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। পণ্যের দাম বেড়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃষ্টি বা বন্যা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে কোনো ব্যবসায়ীকে অসাধুভাবে সিন্ডিকেট করতে দেওয়া হবে না।
খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকার এর মধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দাম বেঁধে দিয়ে এবং শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যে কাজে আসেনি, তা খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিই বলে দেয়। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
মনে রাখতে হবে, স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে চরম অসুবিধায় পড়ে। কয়েক অর্থবছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে। একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ, অন্যদিকে, ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশে উৎপন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সব পর্যায়েই মনিটরিং থাকতে হবে- যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে না পারে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল যেসব সংস্থা আছে, সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
তবে শুধু বাজার মনিটরিং দিয়ে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। মনিটরিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে মজুতও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।