মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব গৃহীত

উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
  ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব গৃহীত

রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি- এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। এছাড়া, পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং এ জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ। 'রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি' শীর্ষক প্রস্তাবটি বুধবার সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে বলে জানা যায়।

আমরা মনে করি, এটি আশাব্যঞ্জক। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রম্নত শুরু হোক এমনটিও কাম্য। বলা দরকার যে, প্রস্তাবটি গ্রহণ করার পর জেনিভায় বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি সঞ্চিতা হক বলেছেন, 'অপ্রতুল সম্পদ ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের জন্য সম্ভবপর নয়।' তিনি এটাও বলেছেন, বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা। আমরা আশা করি, এই বিষয়সহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এগিয়ে আসবে। প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা এবং এর নানা নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন সঞ্চিতা হক। একইসঙ্গে, রাখাইনে দ্রম্নত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের শুরু করার ওপর জোর দেন তিনি। ফলে এই সংকটের সার্বিক বিষয় অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক মহল এগিয়ে আসুক এবং যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট হত্যা-নির্যাতন শুরুর কারণে মাত্র কয়েক মাসে সাত লাখ ৩৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ ক্ষেত্রে এটাও বলা দরকার, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। সে থেকে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ অনেকটা এককভাবেই মোকাবিলা করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। আমরা মনে করি, প্রত্যাবাসন সফল না হলে বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিকভাবেই তা উদ্বেগের। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর।

উলেস্নখ্য, এবারের গৃহীত প্রস্তাবটিতে সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, রোহিঙ্গাদের বাস্তুচু্যত করা এবং তাদের জোরপূর্বক বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আর প্রস্তাবটি মিয়ানমারে যুদ্ধরত সব পক্ষকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। এছাড়া, মিয়ানমার সংঘাতের কারণে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাবটি মিয়ানমারকে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানায়। গৃহীত প্রস্তাবে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িক আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়। এছাড়া, প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের জন্য অপর্যাপ্ত ও সংকুচিত আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা প্রদান করার জন্য আহ্বান জানানোসহ যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়, তা আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটকে বিবেচনায় রেখে আন্তর্জাতিক মহল আরও তৎপর হবে এমনটি কাম্য।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। যা আন্তর্জাতিক মহলকে ভাবতে হবে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে