মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি জাতীয় সমস্যা

সাকিবুল হাছান
  ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি জাতীয় সমস্যা

পূর্বের ধারণা অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিল। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে একটি রহস্যময় তথ্য প্রকাশ করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়েন্টিফোর। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। ৩৩ বিসিএস থেকে ৪৬ বিসিএস পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা ওঠে এসেছে। সেই সঙ্গে সবশেষ গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হওয়া রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারের প্রায় ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতেবেদনে দাবি করা হয়েছে, ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৬ তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ক্যাডার-ননক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত পিএসসির বড় কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ছিল, সব সেক্টর দূষিত হয়েও অন্তত বিসিএসের জায়গাটি দূষিত হয়নি। এমন বিশ্বাস লালন করা দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তাদের হতাশা প্রকাশ করার কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন না। এই কর্মকান্ড থেকে এটাই প্রমাণ করে- প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে নেতৃত্ব ও সুষ্ঠু তত্ত্বাবধায়নের অভাব, কর্তব্যে অবহেলা এবং নৈতিকতার অবক্ষয়।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টিকে এখন আর হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। যেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পরীক্ষা বিসিএসের প্রশ্ন ফাস হয় সেখানে আর কিছু বলার থাকে না। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সঙ্গে যুক্ত, তারা একদিকে যেমন জাতির মেধাবী সন্তানদের বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে হাঁকিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা হতাশায় ভুগে। একজন শিক্ষার্থী চিন্তা করে এত পরিশ্রম করেও চাকরি পায় না অথচ অন্য জন পরিশ্রম না করেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। যা খুবই দুঃখের এবং হতাশাজনক। এ ধরনের হতাশা একজন শিক্ষার্থীর মেধাকে ধ্বংস করে দেয়।

আমাদের দেশে মূলত দুই ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের দৃশ্য দেখা যায়। একটি পরীক্ষার দুই-একদিন আগে ফাঁস হওয়া, আরেকটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ফাঁস হওয়া। এখন নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে চাই কঠোর আইন, সেই সঙ্গে প্রশ্নপত্র বিতরণে ভিন্নতা আনতে হবে। প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধের জন্য সব থেকে কার্যকর পদক্ষেপ হলো 'প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধ আইন' প্রণয়ন করা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের সুষ্ঠু পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব হবে।

সাকিবুল হাছান

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে