পাঠক মত

সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান আত্মহত্যা নয়

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানুষের কাছে নিজের জীবনের চেয়ে প্রিয় কিবা হতে পারে! কে-ই বা চায় পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, কাছের মানুষদের ছেড়ে অকালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে। কিন্তু জীবন যখন তিক্ত অভিজ্ঞতায় পূর্ণ, হতাশা, নিরাশা, বিষাদ, হীনম্মন্যতা, ডিপ্রেশন যখন নিত্যদিনের সঙ্গী, তখন মানুষ মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নেয় আত্মহত্যাকে। ভাবে সব সমস্যার সমাধান মিলবে নিজেকে শেষ করে। কিন্তু সত্যিই কি আত্মহত্যার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান মেলে? আত্মহত্যার ফলে বাবা-মা তার সন্তানকে হারায়, বন্ধুবান্ধব তার বিশ্বস্ত বন্ধুটিকে হারায়, কেউবা হারায় তার প্রিয় মানুষটিকে। তবুও দিনকে দিন বাড়ছে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। আত্মহত্যার পেছনে কারণ হিসেবে দেখা যায় পারিবারিক সমস্যা, লেখাপড়ার অতিরিক্ত চাপ, আর্থিক সমস্যা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, প্রেমে ব্যর্থতা, একাকিত্ব, হীনম্মন্যতা, স্বপ্নভঙ্গ ইত্যাদি। আত্মহত্যার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ পারিবারিক সমস্যা। ছেলেমেয়ে ভালো রেজাল্ট, ভালো কলেজ, ভার্সিটি, মেডিকেলে চান্স না পেলে তাদেরকে কটু কথা বলা, আত্মীয়স্বজনের সামনে হেয়প্রতিপন্ন করা, কখনো বা তাদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে মানসিক চাপের সৃষ্টি করা হয়। একবারও ভাবা হয় না জীবনটা তো তাদের। স্বপ্ন ভঙ্গ তো হয়েছে ওদের। বর্তমানে বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করার আগে চিন্তা করেন সমাজের কথা। ভাবেন কীভাবে সমাজের সামনে মুখ দেখাবেন? সমাজকে না বুঝে আপনার ছেলেমেয়ের জায়গায় নিজেকে বসে তাদের একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার ছেলেমেয়েকে সাহস জোগান। সহযোগিতা করুন মানসিক বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে। ভবিষ্যতে ভালো করা জন্য উৎসাহিত করুন। নতুবা আত্মঘাতী হওয়ার পরে কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নেই! আবার কখনো কখনো দেখা যায়, মেয়েদের বিয়ে নিয়ে বাবা-মা চাপ সৃষ্টি করে। যার কারণে মেয়ে মানসিক অশান্তিতে ভোগে। ফলস্বরূপ না পারে ঠিক মতো লেখাপড়া করতে আর না পারে জীবনের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্নকে মাটিচাপা দিতে। আর যদিও বা বিয়ে করে নেয়, এরপর নতুন পরিবারে মানিয়ে উঠতে হিমশিম খায়। শ্বশুরবাড়ি লোকের অসৌজন্যমূলক আচরণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। আর এই দীর্ঘ সময় মানসিক চাপ সহ্য করতে করতে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। মেয়েকে নিজের মতো বাঁচতে দিন। তাকে বাঁচতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে উৎসাহিত করুন। যেহেতু, আমাদের লেখাপড়ার জন্য বেশিরভাগ সময় কাটে আমাদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, সেহেতু আত্মহত্যা প্রতিরোধে বন্ধুবান্ধব অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ আমাদের মনের যত সব আবেগ, অনুভূতি নিঃসংকোচে বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকি। তাই বন্ধুর বলা সমস্যাগুলোকে সব সময় হেলায়-ফেলায় উড়িয়ে না দিয়ে একটু গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন। তাকে সময় দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে আপনার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আড্ডা দিন, ঘুরে বেড়ান, উৎসাহিত করুন। এতে তার সব সমস্যা সমাধান না হলেও নিজের কষ্টদায়ক অনুভূতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। আর যদি উৎসাহিত করতে না পারেন, তবে আর যাই হোক নিরুৎসাহিত করবেন না। দেখা যায় বন্ধুবান্ধবকে আমরা মজার ছলে অনেকভাবেই ছোট করে ফেলি। বিষয়টি আপনার কাছে নিতান্ত মজা হলেও আপনার বন্ধুর কাছে হতে পারে তার হীনম্মন্যতার কারণ। তাই এমন মজা করা থেকে বিরত থাকুন। শিক্ষক, শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীকে প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসতে সহযোগিতা করতে পারেন। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে ধীরে-সুস্থে বুঝিয়ে শিখান। উৎসাহিত করুন জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আত্মীয়স্বজনরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে তুলনা করা বন্ধ করুন। পাশের বাসার আংকেল আন্টিরা কটু কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের বলা ছোট ছোট বাক্য কাউকে মানসিকভাবে তীব্র বিপর্যস্ত করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় সহযোগিতা হলো নিজেই নিজেকে সাহায্য করা। প্রবাদ আছে, যে নিজেকে সাহায্য করে আলস্নাহ তাকে সাহায্য করেন। নিজের আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, সহনশক্তি বাড়াতে হবে। যেখানে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কার্ডিওগ্রাফই বক্র সেখানে জীবন কীভাবে সরলরৈখিক হতে পারে! জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। এর মধ্যে শুধু কৌশলে বেঁচে থাকাটা শিখতে হবে। তাই কখনো আত্মহত্যার কথা মাথায় আসলে জীবন নামক উপন্যাসে পাতায় একটা কমা দিয়ে ছোট বিরতি নিন। আপনার পছন্দের কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন। তা হতে পারে গল্প, উপন্যাসের বই পড়া, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, নাচ, গান, বাগান করা ইত্যাদি। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোও বেশ কার্যকর। একাকিত্ব দূর করতে পোষ্য প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান। একবার নিজের সমস্যাগুলো থেকে বের হয়ে দেখুন, দেখবেন ছয় মাস পর অতীত ভেবে হাসবেন। তাই আজকের সমস্যার জন্য নিজের জীবনকে অকালে শেষ করার কোনো মানেই হয় না। নিজেকে নিজের মোটিভেটর বানিয়ে জীবনে সামনে দিকে এগিয়ে চলুন। কারণ, অভিনন্দনকারীর সংখ্যা অসীম হলেও সমর্থনকারীর সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন হয়। আত্মহত্যাকারীর বেশির ভাগ মানুষই একাকিত্বতে ভোগে। সেহেত,ু তাদের একটু সময় দিয়ে, তাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে, তাদের কাছে টেনে যত্নে করে জীবনের গুরুত্ব বোঝালে হয়ত বেঁচে যেতে পারে একটা সম্ভাবনাময় প্রাণ। আপনার দেওয়া এই স্বল্প সময় বাঁচাতে পারে আত্মহত্যাকারীকে, তাদের জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই অবহেলায় নয়, বরং গুরুত্বের সঙ্গে আত্মহত্যাকারীর সমস্যাগুলো বিবেচনা করি, তাদের বোঝাই সাময়িক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান আত্মহত্যা নয়। উপদেশ দিয়ে নয়, বরং বন্ধুর মতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আত্মহত্যাকে আমরা সবাই প্রতিরোধ করতে পারি। জিন্নাতুন নেসা (শান্তা) শিক্ষার্থী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়