প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা, প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত প্রতারণা কিংবা গুজব বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। আর এমন ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক ও ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীও রয়েছেন। তথ্য মতে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তারা একাধিক নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেও জড়িত বলে জানা গেছে।
আমরা বলতে চাই, দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এমন ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। জানা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সাবেক সেনাসদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অর্থ নিতেন। ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন তারা। চক্রের সদস্যরা ওই পরীক্ষার আগের রাতে তাদের চুক্তি করা শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাত স্থানে রেখে ওই প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর দিয়ে দেন। এছাড়া পিএসসির অফিস সহায়ককে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নটি উপপরিচালকের কাছ থেকে তিনি নিয়েছিলেন। এর জন্য দুই কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এর আগেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কক্ষের ট্রাংক খুলে তিনি প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো ফাঁস করেছেন। সেগুলোর মধ্যে বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও রয়েছে।
আমরা বলতে চাই, প্রশ্নফাঁস চক্রের এই তৎপরতা কতটা ভয়াবহ তা অনুধাবন করা জরুরি। এটা মনে রাখা দরকার, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। ফলে এই ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে। এছাড়া প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানো, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বারবার। এছাড়া নানা সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে, শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তার মতো সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণিরও যুক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, সেটি ভাবনার অবকাশ রাখে।
আমরা বলতে চাই, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কিংবা প্রশ্নফাঁসের গুজব শুধু ভীতিপ্রদই নয়, বরং সমাজের আশঙ্কাজনক অবক্ষয়েরও নির্দেশক। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তারা একদিকে যেমন জাতির মেধাবী সন্তানদের বঞ্চিত করে; অন্যদিকে, হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। সঙ্গত কারণেই দেশকে, সমাজকে, এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। আর প্রশ্নফাঁস রোধ কিংবা এ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের গুজব রোধে কঠোর হওয়ারও বিকল্প নেই। কেননা, অনেক সময় গুজব ছড়িয়েও পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে এসব চক্র। যারা প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে যুক্ত তাদের নির্মূলে কঠোর হবে। এসব চক্রের অপতৎপরতা রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, যাদের গ্রেপ্তার করা হলো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চত হোক। মনে রাখা দরকার, দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। অথচ প্রশ্নফাঁসের ঘটনা কতটা ভয়ানক হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্নফাঁস চক্রের সব অপতৎপরতা রোধ করতে হবে। প্রশ্নফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।