স্টারমারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
স্টারমারের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এগুলো হলো স্থবির অর্থনীতিকে সচল করা, সরকারি সেবাগুলোকে ঠিক করা ও দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবনযাত্রার যে ব্যয় বেড়েছে, তাতে সামঞ্জস্য আনা ও আবাসস্থল সংকটের বিষয়টির সমাধান করা। স্টারমার বলেন, দেশে পরিবর্তন আনার বিষয়টি সুইচ টিপে ঠিক করার মতো নয়। পৃথিবী এখন আরও অস্থির স্থান হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি ঠিক করতে আরও সময় লাগবে।
প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আহমদ মতিউর রহমান
যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করেছে লেবার পার্টি। এর ফলে, দলটি ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরল। জন মেজর জমানা অবসানের পর কয়েকটি নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি লেবার দল। জেরেমি করবিন রণে ভঙ্গ দেওয়ার পর স্টারমার লেবার পার্টির হাল ধরেন। পরিবর্তনের কথা বলে ভোটারদের মধ্যে নতুন একটি লক্ষ্য হাজির করতে সক্ষম হন তিনি। তার সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে। ৪শ' আসন পার করে তিনি বিশাল জয় এনে দেন ক্ষমতা বিভুক্ষু লেবার দলকে। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন টোরি পার্টি নানান ঝক্কি ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। শেষে তিনি নির্বাচন আহ্বান করেন এবং ৪ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জনমত জরিপ, বুথ ফেরত জরিপ সবকিছুতেই স্পষ্ট হচ্ছিল বড় পরাজয়ের স্বাদ পেতে যাচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি। শেষে তাই হয়েছে। ৩০ জনেরও বেশি মন্ত্রী ফেল করেছেন। এর মধ্যে ক্যাবিনেট মিনিস্টার ১২ জন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রেসও ফেলের খাতায় আছেন। লেবার দলের সাবেক নেতা জেরেমি করবিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন। আর ক্ষমতা গ্রহণ করেই প্রধানমন্ত্রী স্টারমার অভিবাসী বিতাড়নের 'রুয়ান্ডা পরিকল্পনা' বাতিল ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে আগের সরকারের নেওয়া বিতর্কিত পদক্ষেপ 'রুয়ান্ডা পরিকল্পনা'। এটা বাতিল ঘোষণা করলেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার।
যুক্তরাজ্যের সাম্প্র্রতিক ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করা জয় নিয়ে সরকার গঠনের পর শনিবার প্রথম কার্যদিবসে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন লেবার পার্টির নেতা স্টারমার। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে 'পরিবর্তনের নেতা' হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা এরই মধ্যে 'মৃত ও সমাহিত।' এই অকেজো পদক্ষেপটি দ্রম্নতই বাতিল করা হবে। নির্বাচনের ভরাডুবির মধ্য দিয়ে বিদায় নেওয়া কনজারভেটিভ দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ২০২২ সালে 'রুয়ান্ডা পরিকল্পনা' গ্রহণের কথা প্রথম জানান দেন। তখনই এটি বাতিলের পক্ষে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়। দেশটির আদালতও রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বারবার স্থগিত করে রায় দেন। ফলে তা আর বাস্তবায়ন করতে পারেননি সুনাক। অভিবাসী ভোটাররা সুনাকের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে- যার প্রভাব ভোটের ফলাফলেও দেখা গেছে। কার্যত তারা এখন ভারমুক্ত।
এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র ১২১টি আসন পেয়েছে- যা দুই শতাব্দীর ইতিহাসে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দলটির পাওয়া সর্বনিম্ন আসন। নির্বাচনে রেকর্ড ৪১২ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত করেছে লেবার পার্টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো দলের প্রয়োজন হয় ৩২৬ আসন, এ সংখ্যা তা থেকে অনেক বেশি। এই দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি বেস্নয়ারের পর সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছেন কিয়ার স্টারমার। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে কনজারভেটিভ পার্টি। ঋষি সুনাকের পরামর্শক উইলিয়াম হগ ইতিহাস বিচারে একে বিপর্যয়কর ফলাফল হিসেবে মন্তব্য করেন। এবারের নির্বাচনে ১২ জন সাবেক মন্ত্রী তাদের আসন হারিয়েছেন। পরাজিত তারকা প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও রয়েছে।
কনজারভেটিভ দলের ভরাডুবির পর দলনেতার পদ ছেড়েছেন ঋষি সুনাক। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে বৃটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মি. সুনাক। শুধু তাই নয়, তার হাত ধরেই প্রথমবার কোনো ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। তবে তার সময়টি ভালো যায়নি। লেবার পার্টির নেতৃত্বে থাকা স্যার কিয়ের স্টারমারে বয়স ৬১ বছর। ২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি। বয়স ও অভিজ্ঞতার বিষয়টিকেও অনেকে বড় করে দেখতে চাইছেন।
লেবার নেতা স্টারমারসহ তার দলের প্রার্থীরা রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোটের প্রচার চালান। ব্যালটে তারা এর সুফলও পেয়েছেন। কারণ এ পরিকল্পনায় মাত্র ১ শতাংশ কাগজপত্রহীন আশ্রয়প্রার্থীদের বিতাড়নের কথা রয়েছে। কিন্তু সরকারি সেবা ঠিকঠাক এগিয়ে নিয়ে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছোট ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পাওয়ার আশায় আসা হাজারো অভিবাসীর চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল করে বিষয়টি কীভাবে সমাধানের দিকে নিয়ে যাবেন স্টারমার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে তার সরকার 'সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ড' নামে একটি বাহিনী বা শাখা করবেন। পুলিশ, গোয়েন্দা ও প্রসিকিউশন থেকে দক্ষ লোকবল নিয়ে এই কমান্ড গঠন করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ডের মতো ক্ষমতা দেওয়া হবে তাদের। তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাচার চক্র ভেঙে দেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার গঠনের পর রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিলে স্টারমারের ঘোষণা তার দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নের পথে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কী এই রুয়ান্ডা পরিকল্পনা? রুয়ান্ডা পরিকল্পনা নিয়ে ঋষি ?সুনাকের ভাষ্য ছিল, যারা বৈধতার কাগজপত্র ছাড়া বা বিনা অনুমতিতে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে, তাদের ধরে ধরে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারা আশ্রয় চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করবে, শেষ পর্যন্ত তারা যদি সুযোগ পায় তাহলে কেবল যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। এই পদক্ষেপে ছোট ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করবে বলে দাবি করেছিলেন সুনাক। যদিও আইনি বাধার মুখে একজন অভিবাসীকেও রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারেননি তিনি। যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনের ছয় সপ্তাহের প্রচার পর্বে শুধু দেশটিতেই নয়, বিশ্বজুড়েই সুনাকের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেখা যায়। গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট রুয়ান্ডা পরিকল্পনাকে 'অবৈধ' ঘোষণা করে বলে, 'তৃতীয় বিশ্বের দেশ রুয়ান্ডাকে নিরাপদ মনে করার কোনো কারণ নেই।' রয়টার্স বলছে, এই রায়ের পর সুনাক সরকার আদালতের সিদ্ধান্ত পাশ কাটাতে রুয়ান্ডার সঙ্গে নতুন চুক্তি করে, যাতে তারা আশ্রয়প্রার্থীদের সে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া শুরু করতে পারে। সরকারের নতুন চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যায় বিভিন্ন অধিকার সংস্থা ও ইউনিয়ন। সেখানেই আটকে আছে সুনাকের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা। তবে চুক্তি অনুযায়ী রুয়ান্ডা সরকারকে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছে সুনাক সরকার। এই অর্থ দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছে এবং জনবলও নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। রুয়ান্ডাকে দেওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ বা আশা না রেখেই এই পরিকল্পনা বাতিল করতে হচ্ছে স্টারমারকে। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের করের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিয়ে গেছেন সুনাক।
কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয়ের কারণ কি? বিশ্লেষকরা এটা নিয়ে ভাবছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনে এমন ফল যে হতে পারে তা আগে থেকেই ঠাহর করা যাচ্ছিল। কারণ, দলটি ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে নানাবিধ ইসু্যতে ব্যাপক বিতর্কে জড়িয়েছে। এমনকি করোনা মহামারির সময়ে লকডাউনের সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করে পার্টি করেছেন গোপনে। তা ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাত যেমন বাইরের কোনো কিছুর সহায়তা ছাড়াই উদ্গীরণ ঘটে, ঠিক তেমনি তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। একে অভিহিত করা হয়েছে পার্টিগেট কেলেঙ্কারি হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হারান বরিস জনসন। দলটি শুধু এই ইসু্য নয় আরও অনেক ইসু্যতে বিতর্কিত হয়ে পড়ে। দলের ভেতরেই বিভক্তি দেখা দেয়। এক নেতা অন্য নেতার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন। একপর্যায়ে তো সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়। বলা হয়, তার সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে বরখাস্ত করতে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের অনুমতি না নিয়ে তিনি একটি বিতর্কিত ইসু্যতে লিখেছিলেন। ওই লেখায় তিনি মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন। এর ফলে, বিরোধী ৫টি দল একজোট হয়ে তাকে বরখাস্ত করতে ঋষি সুনাকের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। ব্রেভারম্যান কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের জন্য লড়াই করতে পারেন বলেও দলের ভেতর গুঞ্জন ওঠে। ফলে দলের ভেতর দলীয় সংঘাত তীব্র হয়ে ওঠে। এ খবর মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। দেশের অর্থনীতি, দলীয় দ্বন্দ্ব সবকিছু মিলে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আকস্মিক আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেন। বিরোধী লেবার দল সেই দুর্বলতাকে লুফে নেয়। এ অবস্থায় কনজারভেটিভ পার্টি যে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং বরিস জনসনের পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ভোটাররা। তারই প্রতিদান দিয়েছেন তারা ৪ জুলাইয়ের জাতীয় নির্বাচনে।
নির্বাচনের পর দলটির ভেতরকার বিরোধ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ৫ জুলাই প্রকাশিত এক রিপোর্টের শিরোনাম ছিল- 'টোরি ইনফাইটিং বিগিনস্ অ্যাজ ঋষি সুনাক লিডস পার্টি টু রেকর্ড ব্রেকিং ডিফিট'। অর্থাৎ রেকর্ড ভাঙা পরাজয়ে ঋষি সুনাক যখন দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন টোরির দলের ভেতরেই লড়াই শুরু হয়ে গেছে। দলটির ভেতরকার ডান ও বামপন্থিরা তাদের দলের ভবিষ্যৎ গতিবিধি নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ইতিহাসে তারা লেবার দলের কাছে পরাজয়ের সবচেয়ে বড় রেকর্ড গড়েছে। আবারো দলের ভেতর ডানপন্থি এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান প্রকাশ্যে আসেন। তিনি ভোটারদের থেকে কনজারভেটিভ পার্টি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে দু'বার ক্ষমা চান। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েলউইন হ্যাটফিল্ডে ১৯ বছর ধরে এমপি। তিনিও টোরিদের সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে। বলেছেন, নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য সমাধানে অক্ষম ছিলেন তারা। তিনি একে সীমাহীন এক 'সোপ অপেরা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলতে অক্ষমতার কারণে ভোটাররা হতাশ হয়েছেন। তারা জানিয়ে দিয়েছেন, যদি আপনারা একে অন্যের সঙ্গে একমত হতে না পারেন, তাহলে আপনাদের ভোট দিতে আমরাও একমত নই। আমরা রাজনীতির মৌলিক নিয়মগুলো ভুলে গিয়েছি। সেটা হলো একটি বিভক্ত দলকে জনগণ ভোট দেয় না।
মি. স্টারমার মন্ত্রিসভায় বেশ পরিবর্তন এনেছেন। বলা হচ্ছে, নতুন মন্ত্রিসভায় কিছু চমকও দেখা গেছে। মন্ত্রিসভায় অনেক নারীকে তিনি নিয়েছেন। পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর থেকে গিয়ে বৃটেনে বসবাসকারী শাবানা মাহমুদকে তিনি বিচারমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। কোনো মুসলিম নারী এই প্রথম ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন। স্টারমারের মন্ত্রিসভার যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রীর্ যাচেল রিভস। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ ডেভিড ল্যামি। নতুন সরকারে অ্যাঞ্জেলা রায়নারকে উপপ্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ইভেত্তে কুপার। জন হ্যালি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ব্রিজেত ফিলিপসন শিক্ষামন্ত্রী, এড মিলিব্যান্ড জ্বালানিমন্ত্রী, জোনাথন রেনল্ড বাণিজ্যমন্ত্রী, লিজ কেন্ডাল শ্রম ও কারামন্ত্রী, স্টিভ রিড পরিবেশমন্ত্রী, পিটার কাইলি বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী, লিসা নন্দী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। লিসা নন্দী ভারতীয় বংশোদ্ভূত। করোনা মহামারির সময়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা প্যাট্রিক ভ্যালান্সকে বিজ্ঞান বিষয়কমন্ত্রী করা হয়েছে। আর টিম্পসন গ্রম্নপের মালিক জেমস টিম্পসনকে কারামন্ত্রী করা হয়েছে।
আর কি করবেন স্টারমার? সরকারে নিজের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনের কথা জানিয়ে ৬১ বছর বয়সি এই নেতা বলেন, তিনি দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ঠিক করবেন। এ ছাড়া সীমান্ত নিরাপদ করাসহ সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। কিন্তু
স্টারমারের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এগুলো হলো স্থবির অর্থনীতিকে সচল করা, সরকারি সেবাগুলোকে ঠিক করা ও দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবনযাত্রার যে ব্যয় বেড়েছে, তাতে সামঞ্জস্য আনা ও আবাসস্থল সংকটের বিষয়টির সমাধান করা। স্টারমার বলেন, দেশে পরিবর্তন আনার বিষয়টি সুইচ টিপে ঠিক করার মতো নয়। পৃথিবী এখন আরও অস্থির স্থান হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি ঠিক করতে আরও সময় লাগবে।
আহমদ মতিউর রহমান : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক