দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপ অনুভব করছে- এমন বিষয় এর আগে আলোচনায় এসেছিল, যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, জুনে খাদ্যপণ্যের দাম সামান্য কমলেও ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। এর মানে হলো ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে গত অর্থবছর ১০৯ টাকা ৭৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এ তথ্য উঠে এসেছে রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে।
লক্ষণীয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যখন ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি দামে পণ্য বা সেবা পেতে বেশি খরচ করতে হয়েছে তখন তা উদ্বেগের। এছাড়া অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি বিবিএসের তথ্যের চেয়ে বেশি। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। একদিকে বেশি দামে পণ্য ক্রয়, অন্যদিকে, স্বাভাবিকভাবেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ- যা এড়ানোর সুযোগ নেই।
তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন সরকার। পরে তা সংশোধন করে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। কিন্তু জানা যাচ্ছে, সেই লক্ষ্যও পূরণ করা গেল না। কেননা, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ- যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ৯.৭৪ শতাংশ ছিল। আর এ বছর মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এছাড়া উলেস্নখ্য, এ বছর জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে সামান্য কমলেও টানা তৃতীয় মাসের মতো দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে। জুন মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ- যা মে মাসে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ ছিল। এপ্রিলে ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে জুনে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ- যা মে মাসে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ ছিল। অন্যদিকে, এটাও আমলে নেওয়া দরকার, বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, মূল্যস্ফীতির কারণে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে ভুগতে হচ্ছে বেশি। জুনে শহর এলাকায় যেখানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গ্রামে এই হার ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, এর আগে এমন আলোচনায় উঠে এসেছিল যে, মূল্যস্ফীতির পেছনে বিশ্ববাজারের প্রভাব আছে যেমন, তেমনি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনারও ত্রম্নটি আছে। কারণ হিসেবে সামনে এসেছিল, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ হয় না। ফলে এই দিকগুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। সিন্ডিকেট আছে, মধ্যস্বত্বভোগী- এই আলোচনাও নানা সময়েই সামনে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অভিযোগও উঠেছে- যা আমলে নিতে হবে। স্মর্তব্য, বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর; ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতি। কিন্তু এটা এড়ানো যাবে না, আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ সংসার চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন। দুই বছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। প্রভাব পড়ছে মানুষের যাপিত জীবনে- এমনটিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির প্রভাব আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি, যদি নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে দিশেহারা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এমনটি স্বাভাবিক। এর আগে এমনটিও জানা গিয়েছিল, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কেনার বাজেট থাকছে না অনেকের। আর এখন যখন জানা যাচ্ছে যে, দুই বছর ধরে চলা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, জীবনযাপনে প্রভাব পড়ছে- তখন তা এড়ানো যাবে না। সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবে এমনটি কাম্য।