পরিবেশ উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা
বাংলাদেশে গাছ লাগানোর জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, সিক্ত মাটি এবং সহনীয় তাপমাত্রা নতুন গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আবু হেনা মোস্তফা কামাল
জলবায়ুর পরিবর্তন
জলবায়ুর পরিবর্তন বলতে পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার প্যাটার্নগুলোর পরিবর্তনকে বোঝায়। এটি প্রাকৃতিক এবং মানুষের তৈরি উভয় কারণেই হতে পারে।
কারণসমূহ :
গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন : জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি কার্যক্রম থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস বায়ুমন্ডলে সঞ্চিত হয়।
বনভূমি ধ্বংস : বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা কমে যায় এবং বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
প্রাকৃতিক কারণ : আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাত, সূর্যের ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তন এবং সমুদ্রের প্রবাহের পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক কারণেও জলবায়ুর পরিবর্তন হতে পারে।
প্রভাবসমূহ :
তাপমাত্রা বৃদ্ধি : বৈশ্বিক গড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে- যা তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অস্বাভাবিক আবহাওয়া সৃষ্টি করছে।
বন্যা ও খরা : অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে খরা দেখা দিচ্ছে।
সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি : মেরু প্রদেশের বরফ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে- যা উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি : জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রজাতি তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান হারাচ্ছে এবং বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে।
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা : খরা, বন্যা ও অস্বাভাবিক আবহাওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে- যা খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলছে।
মোকাবিলার উপায় :
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার : সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও জলবিদু্যৎ ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
শক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি: শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ : নতুন গাছ লাগানো এবং বনভূমি সংরক্ষণ করতে হবে।
পরিবহণ খাতে পরিবর্তন : বৈদু্যতিক যানবাহন এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার করতে হবে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বয় এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।
\হবৈশ্বিক উষ্ণতার কারণসমূহ
গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন : কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন: কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি পোড়ানোর ফলে হয়।
অরণ্যনিধন : বনভূমি কেটে ফেলা হলে, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে।
শিল্প ও কৃষি কার্যক্রম: বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং কৃষি কার্যক্রম থেকে নির্গত গ্যাসগুলো বায়ুমন্ডলে গিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
যানবাহনের নির্গমন : গাড়ি, ট্রাক, বিমান এবং অন্যান্য যানবাহন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করে।
জ্বালানির অকার্যকর ব্যবহার : বাড়ি, অফিস এবং অন্যান্য স্থানে জ্বালানির অপচয়ও বৈশ্বিক উষ্ণতার একটি কারণ।
অব্যবস্থাপিত বর্জ্য : মিথেন গ্যাস প্রধানত আবর্জনা এবং বর্জ্য থেকে নির্গত হয়- যা বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী।
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে করণীয়
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ উলেস্নখ করা হলো :
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার : সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদু্যৎ এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো।
শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি : বাড়ি, অফিস ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শক্তি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির প্রয়োগ করা।
বনায়ন এবং পুনর্বনায়ন : নতুন বনায়ন এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করা।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পুনঃচক্রায়িত (রিসাইকেল) এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য (রিইউজ) পণ্য ব্যবহার করা।
কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ: শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও পরিবহণ খাতে কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়া নীতি ও বিধি প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা।
পরিবেশবান্ধব যানবাহন: বৈদু্যতিক যানবাহন এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহার করা।
কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা: টেকসই কৃষি চর্চা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করা, যেমন: সংরক্ষণ কৃষি, পর্যায়ক্রমিক ফসল রোটেশন এবং আচ্ছাদন ফসল চাষ।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রা এবং অভ্যাস গ্রহণে উৎসাহিত করা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: বর্জ্য হ্রাস, পুনর্ব্যবহার এবং পুনঃচক্রায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া।
বৈশ্বিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একযোগে কাজ করা।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বনাঞ্চলের প্রভাব:
কার্বন শোষণ কমে যাওয়া: বনাঞ্চল কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে। বনভূমি ধ্বংস হলে এই কার্বন শোষণের ক্ষমতা কমে যায়, ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ বেড়ে যায় যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি: গাছ কেটে ফেললে বা বন পুড়ে গেলে সেগুলোর মধ্যে সঞ্চিত কার্বন বায়ুমন্ডলে নির্গত হয়,যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস: বনাঞ্চল বৃষ্টিপাতের ধরন, স্থানীয় তাপমাত্রা এবং বায়ুর আদ্রতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বনাঞ্চল ধ্বংস হলে এই প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়।
জীববৈচিত্র্য হ্রাস: বনাঞ্চল বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল। বন ধ্বংস হলে এই প্রজাতিরা বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়- যা ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে।
মাটি ও পানি রক্ষায় বনাঞ্চলের ভূমিকা: বনাঞ্চল মাটি ক্ষয় প্রতিরোধ ও পানির গুণগতমান বজায় রাখতে সাহায্য করে। বনাঞ্চল ধ্বংস হলে মাটি ক্ষয় এবং পানির গুণগতমান হ্রাস পায়, যা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে প্রভাবিত করে।
বাংলাদেশ ও বিশ্ব বনাঞ্চলের কিছু সমীক্ষা ও পরিসংখ্যান এবং পরিসংখ্যানগত পার্থক্য:
বাংলাদেশের বনাঞ্চল মোট ভূমির প্রায় ১৭.৫ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত। ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়, বাংলাদেশের মোট বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২.৫ মিলিয়ন হেক্টর। এর মধ্যে সুন্দরবন প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত- যার প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলে উলেস্নখযোগ্য বনাঞ্চল রয়েছে, যেমন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান এবং সীতাকুন্ড ইকোপার্ক।
প্রতি বছর বাংলাদেশে বন উজাড়ের হার প্রায় ২.৬ শতাংশ। এই হার প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। প্রতি বছর লক্ষাধিক গাছ রোপণ করা হচ্ছে।
বিশ্বে মোট বনভূমির পরিমাণ প্রায় ৪.০৬ বিলিয়ন হেক্টর- যা পৃথিবীর মোট ভূমির প্রায় ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ১.১১ বিলিয়ন হেক্টর প্রাথমিক বনাঞ্চল।
বৈশ্বিকভাবে প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন হেক্টর বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই হার সবচেয়ে বেশি।
অনেক দেশ ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। চীন, ভারত, ব্রাজিল এবং ইথিওপিয়া বড় আকারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করেছে।
বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ দেশের মোট ভূমির প্রায় ১৭.৫ শতাংশ- যা বৈশ্বিক গড় ৩১ শতাংশের চেয়ে কম।
বিশ্বে অনেক দেশের বনভূমির পরিমাণ বাংলাদেশ থেকে বেশি, বিশেষ করে ব্রাজিল, রাশিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশের বন উজাড়ের হার ২.৬ শতাংশ- যা বৈশ্বিক গড় ০.২৫ শতাংশের চেয়ে বেশি।
বিশ্বব্যাপী অনেক দেশ ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। চীন, ভারত এবং ইথিওপিয়া বড় আকারের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করেছে, যেখানে বাংলাদেশেও বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে, তবে পরিমাণে অনেক কম এবং বৃক্ষরোপণ পরবর্তী মনিটরিং ও সুপারভিশন হয় না বললেই চলে।
বৃক্ষরোপণ
বৃক্ষরোপণ হলো গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া- যা পরিবেশ সংরক্ষণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপকারিতা:
কার্বন শোষণ: গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ বছরে প্রায় ৪৮ পাউন্ড কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। ফলে বৃক্ষরোপণ বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: বৃক্ষরাজি স্থানীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। গাছের ছায়া তাপমাত্রা কমাতে সহায়ক এবং বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তারা তাপমাত্রা শীতল রাখে। শহুরে এলাকায় গাছপালা তাপমাত্রা হ্রাসে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করে- যা 'তাপ দ্বীপ' প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
জলবায়ুর স্থিতিশীলতা: গাছ বৃষ্টিপাতের ধরন এবং বায়ুর আদ্রতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বনাঞ্চল এবং গাছপালা জলবায়ুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ: গাছের শিকড় মাটিকে দৃঢভাবে ধরে রাখে, ফলে মাটি ক্ষয় কম হয়। এটি ভূমিধস এবং বন্যা প্রতিরোধেও সহায়ক।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: বনাঞ্চল এবং গাছপালা বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল সরবরাহ করে- যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক। জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পানির গুণমান উন্নতি: গাছপালা পানির গুণমান রক্ষা করে এবং বৃষ্টির পানি শোষণ করে- যা মাটির নিচে পানি স্তর বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি খরা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে সমাজের সব স্তরের মানুষকে অংশগ্রহণ করানো গেলে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এটি পরিবেশ সংরক্ষণে জনগণের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে।
বৃক্ষরোপণের প্রক্রিয়া
উপযুক্ত সময়: বাংলাদেশে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় সাধারণত বর্ষাকাল। এটি জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এই সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়- যা নতুন লাগানো গাছের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বর্ষাকালে মাটি সিক্ত থাকে এবং গাছের মূল ভালোভাবে বসতে পারে।
শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রম্নয়ারি) কিছু গাছ লাগানো যেতে পারে, বিশেষ করে সেগুলো কম তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। তবে শীতকালে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, কারণ এই সময়ে বৃষ্টিপাত কম হয়।
উপযুক্ত স্থান নির্বাচন: গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী স্থান নির্বাচন করা। যথাযথ আলো, পানি এবং মাটির গুণাগুণ বিবেচনা করা।
উপযুক্ত প্রজাতি নির্বাচন: স্থানীয় আবহাওয়া ও মাটির ধরন অনুযায়ী গাছের প্রজাতি নির্বাচন করা- যা দ্রম্নত এবং সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি পাবে।
গর্ত তৈরি করা: গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত আকারের গর্ত তৈরি করা।
গাছ লাগানো: গাছের চারা গর্তে বসিয়ে মাটি দিয়ে চাপা দেওয়া। গাছের গোড়ার চারপাশে পানি দেওয়া।
পরিচর্যা: নিয়মিত পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, এবং প্রয়োজনে সার প্রয়োগ করা।
সংরক্ষণ : গাছ বড় হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যা করা এবং প্রয়োজনে বাঁশ বা কাঠের খুঁটি দিয়ে গাছকে সহায়তা করা।
বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম জোরদার করতে প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে:
নীতি ও আইন প্রণয়ন
পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি: সরকারকে বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
বৃক্ষরোপণ আইন: বৃক্ষ কাটা ও বনভূমি ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রণোদনা ব্যবস্থা: বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়াতে ব্যক্তি ও সংস্থার জন্য আর্থিক প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদান করা।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি
শিক্ষা ও প্রচার: স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ এবং বন সংরক্ষণ সম্পর্কে শিক্ষা ও সচেতনতা প্রচার করা।
সামাজিক প্রচারণা: গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো।
উৎসব ও কর্মসূচি: বিভিন্ন সময়ে বৃক্ষরোপণ উৎসব এবং কর্মসূচি আয়োজন করা।
সংগঠন ও সমন্বয়
সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা: সরকার, এনজিও ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং সমন্বয় বৃদ্ধি করা।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ: স্থানীয় সম্প্রদায় এবং কৃষকদের বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।
প্রযুক্তি ও গবেষণা
উন্নত প্রজাতির চারা: স্থানীয় জলবায়ু ও মাটির ধরন অনুযায়ী উপযোগী গাছের প্রজাতির উন্নয়ন এবং ব্যবহার।
বৃক্ষরোপণ প্রযুক্তি: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা কার্যক্রমে গতি আনা।
অবকাঠামো ও সম্পদ
চারা উৎপাদন কেন্দ্র: সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে চারা উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা।
পরিচর্যার ব্যবস্থা: নতুন গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অর্থায়ন
অর্থায়ন নিশ্চিত করা: সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক সাহায্য: আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সাহায্য গ্রহণ।
বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন
কার্যক্রম বাস্তবায়ন: পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।
নিয়মিত মূল্যায়ন: বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের অগ্রগতি ও ফলাফল নিয়মিত মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনী গ্রহণ করা।
সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার
সংরক্ষণ: বিদ্যমান বনাঞ্চল ও গাছপালা সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পুনরুদ্ধার: ধ্বংসপ্রাপ্ত বনাঞ্চল পুনরুদ্ধারের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা।
চলছে বর্ষাকাল।
বাংলাদেশে গাছ লাগানোর জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, সিক্ত মাটি এবং সহনীয় তাপমাত্রা নতুন গাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
শীতকালেও কিছু গাছ লাগানো যেতে পারে, তবে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। উপযুক্ত সময় এবং সঠিক প্রজাতি নির্বাচন করে সঠিকভাবে গাছ লাগানো গেলে পরিবেশের উন্নয়ন ও বনাঞ্চল বৃদ্ধিতে তা উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।