বাজারে আবারও বেড়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম। এই নিয়ে কয়েক দফা ওষুধের দাম বাড়ল সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে। এছাড়াও ফার্মেসিভেদেও দামের পার্থক্য রয়েছে। বাজারে ওষুধের দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা থেমে নেই। খোঁড়া অজুহাতে অনেক কোম্পানি ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চলছে। গত এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে বেশ কিছু ওষুধের দাম ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশও বেড়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে গ্যাস্ট্রিক, অ্যান্টিবায়োটিক, ইনজেকশন, ব্যথানাশক ট্যাবলেট এবং ডায়াবেটিস রোগীর বিভিন্ন ধরনের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। অথচ ইচ্ছেমতো সব ধরনের ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না। পাইকারি ও খুচরা ওষুধ বিক্রেতাদের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মতো দেশের ওষুধের বাজারও এখন নিয়ন্ত্রণহীন। উৎপাদন ব্যয়ভারের নানা খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে ইচ্ছেমতো প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়ছে। মূলত ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায় এবং যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা না নেওয়ায় ব্যাপক হারে বাড়ছে ওষুধের দাম। ফলে, এ খাতে জনসাধারণের ব্যয়ও উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হাঁপানির রোগীরা ওষুধ কিনতে গিয়ে বাড়তি দামের কথা শুনে নানা প্রশ্ন করেন। তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি করতে হয়। অনেক সময় ক্রেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে গিয়ে মার খাওয়ার উপক্রম হয়।
উৎপাদন সংশ্লিষ্টদের মত হচ্ছে, ওষুধ উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ, কর্মচারী খরচ, গ্যাস-বিদু্যৎ বা জ্বালানি খরচ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। আবার ওষুধের গুণগত মান এবং উৎপাদন খরচের জন্য দামে তারতম্য হয়। কোনো কোম্পানি ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। পরে ঔষধ প্রশাসন তা যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেয়।
আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এখানে বিশেষভাবে উলেস্নখ্য, দেশে বেসরকারিভাবে পরিচালিত ২৬৯টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রায় ২৪ হাজার আইটেমের মেডিসিন উৎপাদন করে থাকে। এর বাইরে সরকারিভাবে উৎপাদিত হয় ১১৭ ধরনের ওষুধ রয়েছে- যার দাম নির্ধারণ করে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। উৎপাদনভিত্তিক ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি বাড়ায় এ খাতের যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান এভাবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এভাবে লাগামহীনভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।