শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

রপ্তানি আয়

বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে
  ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
রপ্তানি আয়

একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির প্রশ্নে রপ্তানি আয় কতটা জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই যদি রপ্তানি আয় কমে যায়, তবে তা নেতিবাচক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। আর এক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি এড়ানোরও সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, হঠাৎ পণ্য রপ্তানির হিসাব ওলটপালট হয়ে গেছে। তথ্য মতে, হিসাবে থাকা ২৩ বিলিয়ন (গত দুই অর্থবছরের ২০ মাসে) ডলার উধাও হয়ে গেছে। আর এমন পরিস্থিতিতে গত জুন মাসের রপ্তানির হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি)। ফলে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো মিলছে না। বলা দরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যবহার করে রপ্তানির হিসাব দিয়ে থাকে ইপিবি। আর এনবিআরের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৯৩ কোটি বা ৪৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ডলারের পণ্য। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছর ৪ হাজার ৯৫২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তার মানে গত দুই অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি কমছে।

আমরা বলতে চাই, রপ্তানির ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে এবং রপ্তানি কমে গেলে তার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হতে হবে। এটাও উলেস্নখ্য, ইপিবির রপ্তানি পরিসংখ্যান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে রপ্তানিকারকরা সন্দেহ ও অভিযোগ করে আসছিলেন। দেশের লেনদেন ভারসাম্যে ট্রেড ক্রেডিট বেড়ে যাওয়ায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের শুরু থেকেই অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর হঠাৎ গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকৃত রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করে। তাতে দেশের আর্থিক হিসাব ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে। তবে নতুন করে ঘাটতিতে পড়েছে চলতি হিসাব। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এত দিন ইপিবির তথ্যের ভিত্তিতের রপ্তানির হিসাব করা হতো; কিন্তু সেই হিসাব অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও প্রশ্ন তুলেছে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, রপ্তানির হিসাবেই গরমিল রয়েছে। তাই রপ্তানি আয়ও কম এসেছে। এ কারণে এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানির হিসাব করা হবে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ইপিবি একই রকম রপ্তানির তথ্য ব্যবহার করবে বলে জানা যাচ্ছে।

আমরা বলতে চাই, রপ্তানির হিসাবেই গরমিল রয়েছে, তাই রপ্তানি আয়ও কম এসেছে- এটি আমলে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি আয় কমে গেলে সেটি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে এটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার, কোন কোন পণ্যে রপ্তানি আয় কমেছে এবং কারণ চিহ্নিত করে সেই দিকে মনোযোগী হতে হবে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত দুই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস করে (অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) মোট ২০ মাসের প্রকৃত রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কম।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সার্বিকভাবে রপ্তানি পরিস্থিতি আমলে নিন। প্রকৃত চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কীভাবে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির করা যায় সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখা জরুরি। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করবেন এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে