সীমান্তে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি ও সে দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে আবারও তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বুধবার রাতভর বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী মংডু শহরের আশপাশ থেকে ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ পাওয়া গেছে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে সীমান্ত এলাকা। তথ্য মতে, বুধবার রাত একটা থেকে বিস্ফোরণ হতে থাকে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এমন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান ও সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলছেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশে সংঘাত অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া এটাও আলোচনায় এসেছে যে, বিদ্রোহীরা মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য একের পর এক হামলা হচ্ছে। আর এসব কারণে মংডু শহরের পশ্চিম সীমান্তের টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং ইউনিয়ন ও দক্ষিণের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, সীমান্তে যে আতঙ্ক সৃষ্ট হয়েছে সেটি আমলে নিতে হবে এবং সতর্কতাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার- এর আগে জানা গিয়েছিল যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে জ্বালানি, ভোজ্যতেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে উৎকণ্ঠার বিষয় হিসেবে সামনে এসেছিল যে, অসাধু ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ চক্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পণ্য পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে, এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। স্মর্তব্য, এর আগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে, আবার যখন আতঙ্কের বিষয় সামনে আসছে, তখন পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে- এটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে চলা সংঘাতের আঁচ এসে লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন সময়েই। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, মিয়ানমানের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। এছাড়া সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে।
জানা যাচ্ছে, টানা পাঁচ দিন শান্ত থাকার পর বুধবার রাত থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আর রাতভর বিস্ফোরণ এর আগে এমন তীব্র ছিল না। সীমান্ত এলাকার মানুষ সারা রাত জেগে কাটিয়েছে এমনটিও খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বারবার সীমান্তে আতঙ্কের যে ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বলা দরকার, সীমান্ত এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সীমান্তের ওপারে আবার সংঘাত শুরু হয় গত ১৮ জুন। ওই দিনের পর থেকে টেকনাফে ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত তীব্রতর হয়েছে। আর এ পরিস্থিতিতে যে কোনো অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে, যা ইতিবাচক।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। এছাড়া স্মর্তব্য, এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটাকেও এড়ানো যাবে না। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে- সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।