অভিবাসন প্রত্যাশীদের মৃতু্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
প্রায়ই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে মৌরিতানিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে ৮৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক ডজনের বেশি মানুষ সাগরে নিখোঁজ রয়েছে। মৌরিতানিয়ার স্থানীয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়। সংবাদ সংস্থাটির দেখা তথ্য অনুযায়ী, মৌরিতানিয়ার এনডিয়াগো শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে গত ১ জুলাই (সোমবার) মাছ ধরার বড় একটি নৌকা ডুবে যায়। পরে অভিযান চালিয়ে ওই নৌকায় থাকা ৮৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন দেশটির কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। এ সময় জীবিত উদ্ধার করা হয় পাঁচ বছরের এক মেয়েসহ ৯ জনকে। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনেগাল ও গাম্বিয়া সীমান্ত থেকে ১৭০ যাত্রী নিয়ে নৌকাটি যাত্রা শুরু করে। সে হিসাবে নিখোঁজের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৭২ জনে। শক্তিশালী স্রোতের কারণে আটলান্টিক অনেক বিপজ্জনক। বেশিরভাগ সময় সাগরে চলাচলের অনুপযোগী নৌকা দিয়ে এই পথ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এসব নৌকায় ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ওঠানো হয়। থাকে না পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পানিও। তবে ভূমধ্যসাগরে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় আটলান্টিক মহাসাগর অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় পাঁচ হাজার অভিবাসীর মৃতু্য হয়েছে- যা নজিরবিহীন। অভিবাসনবিষয়ক অধিকার গোষ্ঠী 'ওয়ার্কিং বর্ডারস' এর বুধবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই উলেস্নখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে'র মধ্যে মরক্কো, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল ও গাম্বিয়া থেকে ক্যানারি যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহাসাগরে ৪ হাজার ৮০৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। ৯৫ শতাংশ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃতু্যর মধ্য দিয়ে আফ্রিকা ও স্পেনের মধ্যবর্তী এই জলপথটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী রুটে পরিণত হয়েছে। স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে দ্বীপপুঞ্জে আগত অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেড়ে ১৬ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। একই সময় আলজেরিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে যাওয়ার ভূমধ্যসাগরীয় রুটটিতে মৃতু্য হয় ১৭৫ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর- যা এটিকে দ্বিতীয় প্রাণঘাতী জলপথে পরিণত করেছে। মরক্কো থেকে স্পেনকে পৃথককারী জিব্রাল্টার প্রণালি ও পাশের আলবোরান সাগরে আরও ৭১ জনের মৃতু্য হয়েছে। ফলে স্পেনে যাওয়ার পথে মারা যাওয়া মোট অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩৩ জন।
এমন মৃতু্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকেও ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশিরভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান।
আমরা মনে করি, বিভিন্ন দেশের অভিবাসন প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব মহলের সহযোগিতা ও সঠিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।