দুর্নীতি চলছে বেশ
প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ওমর ফারুক
আমি যাকে ভোট দিয়ে এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছি, তার ছেলেমেয়ে বাংলায় পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারে না। বাংলা বলতে পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে মাথার চুল পর্যন্ত কাঁপে। অথচ তারা জনসমুদ্রের সামনে চেতনার কথা বলে। আমি আমার দেশের জাতিকে সভ্য জাতিতে রূপান্তর করতে যাকে নির্বাচন করেছি, তার চারপাশে অসভ্যই পরিপূর্ণ। সাম্প্রতিক অনেকেই দূর্নীতিবাজ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে। মানুষ দুর্নীতি করে ভালো কথা তবে, এটা কেমন দুর্নীতি? পুরো পুকুর না সাগর চুরি! আমার দেশের অনেক আমলা পরদেশে বেগম পাড়ায় সম্পদে পরিপূর্ণ করেছে। নিজের দেশে আগুন লাগিয়ে বিদেশে শান্তি করছে। তাদের পরিবারও দেখলাম সেখানে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছে।
আমার একাডেমিক ফলাফল তেমন ভালো না হলেও অতিরিক্ত খারাপ না। জিপিএ-৩ ও সিজিপিএ-২ নিয়ে নেতার (কিছু) ছেলেমেয়ে দেশের মস্ত বড় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করে। দেশে এসে বাঙালির সামনে চেতনার বুলি দিয়ে ইংরেজিতে কথা বলে। আর যেটা সবচেয়ে বড় পোস্ট সেটাতে বসে পড়ে। অথচ আমি এক ভাইকে চিনি, যার ছোট্ট একটা ১৫ হাজার টাকা চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা চা খেতে চেয়েছে। ভাবুন, চা খেতে চেয়েছে বিরিয়ানি খেতে চাইলে কত চাইত? আরেক ভাইকে জানি যে, মোটামুটি ২৩টি ইন্টারভিউ দিয়েছেন। এখনো পাগলের মতো ঘুরছে। আরও কত-শত জন কুচকুচে তিমির পার করছে বালিশ ভিজিয়ে।
আমি গাধার মতোই রাতদিন টিউশনি করে মাস শেষে বাসা ভাড়া দিতে পারি না। সেমিস্টার ফি'র জন্য কারও কাছে হাত টানতে হয়। কেউ কেউ ফিরে থাকালেও অনেকে মোটিভেশন দেয়। বাজারে তো আগুন জ্বলছেই। বাসার ময়লা ফেলা থেকে পানির বিল দেওয়া পর্যন্ত মাস শেষে বিষ পান করার টাকাও থাকে না। এই নিষ্ঠুর নগরে নিয়নবাতির নিচে নিজের ছায়া দেখে চোখের জল ফেলি। আমার মতো অজস্র আছে দেশে। আর হঁ্যা, আমরা বেকারকে টাকাও ধার দেয় না। কারণ, সে বেকার টাকা ফেরত দিতে পারবে না। আমরা মানুষকে তখন সাহায্য করি যখন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ কাজে আসে না। কষ্টে ধুকতে ধুকতে ক্যানসার হলে নয়ত মাথার মস্তিষ্ক নষ্ট হলে। হাসপাতালের বিছানায় রোগ নিয়ে কাতরাইলে। একেবারে মরার উপক্রম হলে সাহায্য করি। তাও আবার অনলাইনে বিজ্ঞাপন ফটো দিয়ে।
মিডিয়ার সামনে লাখ টাকার পোশাক পরিধানে আপনি আমাকে চেতনা শিখান! ৭১ সময়কার মুক্তিযুদ্ধার কাপড় ও একজন বর্তমান সরকারি আমলার পোশাক ফকিরাপুল ও লিভারপুল তফাত! জান্নাতে থাকার মতো অবস্থা তাদের। প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে অগ্রগতি! তাদের ছেলেপুলেও এমনভাবে চলাফেরা করে, যেন কানাডা বা আমেরিকায় থাকে। অপর দিকে লাখ লাখ গরিব ও মধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রী মেধা থাকার পরও ভালো জায়গায় সুযোগ হয় না। ভালো কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারে না। ভালো কলেজে আসে না। আসলেও ঠিকঠাক চালিয়ে যেতে পারে না। কারণ, তার বাবা অসুস্থ হয়ে মৃতু্যর প্রহর গুনছে। মা কোনো মতে সংসার চালাচ্ছে। দুই-একটা টিউশন করে নিজে চলে আবার ছোটো ভাইবোনদেরও দেখে।
গাড়ি ভাড়া, ময়লা, পানি, গ্যাস, বিদু্যৎ, নেট ও বাসা ভাড়া দিয়ে পকেটশূন্য হয়ে যায়। আর ওইদিকে যে সুদ খায়, তার বাড়ির সীমানা প্রায় ২০ একর। দুর্নীতিবাজদের সম্পদ দেশজুড়ে। নির্বাচনের সময় যে নেতা সবাইকে জড়িয়ে ধরত, তাকে সালাম দিয়ে একটা সাইন নিতে গেলেও মাধ্যমিক ফেল ছোট ভাইয়ের পা ধরতে হয়। সহস্র কল দিয়ে পুচকে নেতাকে উসলাতে ফুসলাতে হয়। অথচ আমি গ্র্যাজুয়েট! নেতার চাঙ্গারা আমাকে পাত্তাই দেয় না। একটা সাইনের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। কতজনের কাছে যাইতে হয়। কেন ভাই আমি, ভোট দেই নাই? আমার পরিবার ভোট দেই নাই? তাহলে এত বৈষম্য কেন?
বড়রা বড় হচ্ছে, ছোটরা ছোট হচ্ছে। না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করছে অনেকেই। কারও হাতে চেকবই ১০টা, কারও হাতে ঋণের বই ২০টা। কারও পেস্নটে ডাল-ভর্তা আর কারও পেস্নটে গরু ইলিশ রান্না। কারও কাছে ৭২ লাখ টাকার গাড়ি কারও সামনে ২৭ টাকা ভাড়ার টিটি। কারও ঘরে এসি আবার কেউ বিদু্যৎ গেলে খোলা মাঠে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, আলস্নাহ কেন এই করুন পরিস্থিতিতে ফেললা? আমার এই দেশে জন্ম কী এতটাই পাপের? আমার পূর্ব-পুরুষের কী কোনো অভিশাপ আছে? কখন আমি শান্তি পাব? কখন পরিবারের মুখে হাসি দেখব? কখন চাকরি করব? আমাদের জন্য কি কোথাও কেউ নেই?
ওমর ফারুক
ইংরেজি বিভাগ
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।