তরুণ প্রজন্মের পরিবর্তন জরুরি
প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ
তরুণ শব্দটি অনেক ছোট হলেও এর শাব্দিক অর্থ মোটেও ছোট নয় কারণ, তরুণ তো তাকেই বলা হয় যার মধ্যে রয়েছে সৌন্দর্য, সজীবতা, জীবনীশক্তি ও উদ্দীপনা। তরুণ বয়স মানুষ জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এই বয়সটি জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ার কারণ এটাই এই বয়স মাথা নোয়াবার নয়। এই বয়সে মানুষ করতে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। তরুণ বয়সে থাকে না কোনো সংশয় কিংবা কোনো ভয়। যেহেতু এই বয়সে কোনো সংশয় কিংবা ভয় থাকে না তাই এই বয়সে সব অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি সেই তরুণ প্রজন্ম যাদের মধ্যে রয়েছে সৌন্দর্য, সজীবতা জীবনীশক্তি ও উদ্দীপনা? এই তরুণ প্রজন্মই কি সেই তরুণ প্রজন্ম যার মধ্যে নেই কোনো সংশয় কিংবা কোনো ভয়? আমরা কি সেই তরুণ প্রজন্ম পেয়েছি যারা তাদের তারুণ্য শক্তি দিয়ে পৃথিবীর সব অসাধ্য সাধন করতে পারবে? নিশ্চয়ই প্রশ্নগুলোর উত্তর হবে, নাহ। কারণ আমার এমন এক তরুণ প্রজন্ম পেয়েছি যাদের মধ্যে নেই কোনো তারুণ্যের শক্তি। যাদের মধ্যে রয়েছে অলসতা, রয়েছে সংশয় ও ভয়। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তরুণদের বড় একটি অংশ জড়িয়ে আছে মাদকের সঙ্গে। উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে ৫৯ শতাংশ মাদকাসক্ত তরুণ বয়সি ছেলেমেয়ে এবং প্রতি ১৭ জনে ১ জন তরুণ মাদকাসক্ত। গ্রাম কিংবা শহরের অলিতে-গলিতে এসব মাদকাসক্ত তরুণদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে শহরের নানা গলিতে কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় ও গ্রামের জনমানবহীন ফাঁকা এলাকাগুলোয় তরুণদের দল বেঁধে মাদক সেবনের দৃশ্য লক্ষ্যণীয় তরুণ প্রজন্মের এই বিশাল অংশের দিকে তাকালে আপনার মনে হতেই পারে পৃথিবীতে সব থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য হলো মাদক। আর তা সেবনের অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়ানো এ আর তেমন কি। এজন্যই মাদকের অর্থ জোগান দিতে তারা বেঁচে নিচ্ছে নানা অপরাধের রাস্তা। রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়, করছে চাঁদাবাজি কিংবা ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য অপরাধ। যে তরুণরা সমাজের সব অসামাজিক অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা আজ তারাই এসব অসামাজিক অপরাধমূলক কাজের উৎস হচ্ছে। যারা অপসংস্কৃতিকে রুখে দেবে বলে কালো পতাকাবাহী দল সৃষ্টি করবে আজ তারাই সেই অপসংস্কৃতির কালো আঁধারে নিজেকে নিভিয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা আমরা কি এমন মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম চেয়েছিলাম? নিসন্দেহে না, তাই এদের পরিবর্তন জরুরি। আবার কিছু তরুণের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যারা জড়িয়ে আছে মোবাইল কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের বেড়াজালে। তাদের কাছে এটি যেন এমন এক বেড়াজাল যেখানে বন্দি থেকে পার করা যায় বছরের পর বছর কিংবা যুগের পর যুগ এমনকি সারাটি জীবনও। হাতে একটি মোবাইল বা কম্পিউটার এবং সঙ্গে হাইস্পিড ইন্টারনেট এতেই জীবন সুন্দর। যে জীবনে খাওয়া, ঘুম কিংবা অন্যান্য কোনো প্রয়োজনীয় বস্তুরও প্রয়োজন নেই। সারাটাদিন ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটক ব্যবহার করা এটি তাদের নিত্যদিনের কাজ। ফেসবুকের একটি ভিডিও দেখে প্রচন্ড হাসি আবার পরবর্তী ভিডিও দেখে মুহূর্তে কান্না দেওয়া, এটাই বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। অথচ কথা ছিল এই তরুণ প্রজন্ম হাসবে সবার সুখে আর কাঁদবে সবার দুখে। আবার ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তারা নানা রকমের অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে করছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন মোবাইলে গেম খেলছে। যে বয়সে দিনের সিংহভাগ সময় ভালো কাজে ব্যয় করার কথা সেখানে তারা এসব ডিজিটাল ডিভাইসের অপব্যবহার করে অসামাজিক কিংবা অপ্রয়োজনীয় কাজে তাদের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট কর ছে। এদেরও পরিবর্তন জরুরি। কিন্তু তরুণদের এই পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব? কি করলে আমাদের তরুণ প্রজন্মের তারুণ্য শক্তি জাগ্রত হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সহজেই বলা যায় তাদের এই তারুণ্য শক্তি, সজীবতা ও উদ্দীপনা শুধু তারাই (তরুণরাই) জাগ্রত করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন শুধু তাদের মানসিক সাহস ও নিজেকে পরিবর্তনের স্বদিচ্ছা। নিজের মেধাকে সব ধরনের অন্যায় ও অপরাধমূলক কাজ থেকে সরিয়ে নিয়ে জনকল্যাণমূলক ও সৃষ্টিশীল কাজের দিকে ধাবিত করতে পারলেই তরুণদের মধ্যে আবারও সজীবতা ও ভালো কাজ করার উদ্দীপনা ফিরে আসবে। এতে পরিবর্তন হবে তরুণ প্রজন্ম, পরিবর্তন হবে আমাদের সমাজব্যবস্থা। মনে রাখতে হবে আজ যারা তরুণ তারাই আগামীতে দেশের মূল চালিকা শক্তি। তরুণ সমাজ যদি সঠিক পরিকল্পনা ও পথপ্রদর্শনের অভাবে নষ্ট হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের দেশ হবে চালিকা শক্তিহীন। আর নিশ্চয়ই চালিকা শক্তিহীন দেশের ধ্বংস অনিবার্য। এজন্য অভিভাবকদেরও উচিত তাদের সন্তান সম্পর্কে সচেতন থাকা। সন্তানদের নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করা। সন্তানদের সঠিক পথপ্রদর্শক হওয়া। যেহেতু দেশের ভবিষ্যৎ চালিকা শক্তি তরুণ প্রজন্ম তাই এই দেশের চালিকা শক্তিকে শক্তিশালী করতে হলেও বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের পরিবর্তন জরুরি।
মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ
রসায়ন বিভাগ
\হঢাকা কলেজ, ঢাকা