পেঁয়াজের দাম বেড়েছে যথাযথ উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
নানা কারণেই বাজার অস্থির হয়, পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিভিন্ন অজুহাতও উঠে আসে। এছাড়া কারসাজিসহ বিভিন্ন কারণে পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ নতুন নয়। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, পেঁয়াজের দাম শতক ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, তালতলা ও কারওয়ান বাজারে দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম অনেকটা বেড়েছে বলেও জানা গেছে। প্রসঙ্গত, পেঁয়াজের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর পেঁয়াজের মৌসুম শুরুই হয়েছে উচ্চ দাম দিয়ে। ফেব্রম্নয়ারি মাসে মৌসুমের শুরুতে ঢাকায় নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা দরে। মার্চে পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা ছাড়িয়েছিল। এরপর এপ্রিলে কিছুটা কমে আবার তা বাড়তে থাকে। কোরবানির ঈদের সময় বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০-৯০ টাকা; যা এখন ১০০-১১০ টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ ১৫ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। শুধু গত তিন দিনেই বেড়েছে ১০ টাকা।
আমরা মনে করি, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কেননা, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। এর এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টন। তার আগের বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৬ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও দেশে এখন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে। এই হিসেবে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি হওয়ার কথা নয় বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে সেটি এড়ানো যাবে না।
লক্ষণীয়, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে চার-পাঁচ মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। ফলে এ সময় মানুষ বেশি পরিমাণে দেশি পেঁয়াজ কিনেছেন। অন্যদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলেও ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দেশটির অভ্যন্তরেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। ফলে বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের চেয়েও বেশি পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, সাধারণত মৌসুমের সময় দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার নিচে থাকে। তবে এবার পেঁয়াজের দর বেশ চড়া ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এপ্রিলে ভরা মৌসুমের সময়ও ৪৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
আমরা বলতে চাই, দাম বৃদ্ধির প্রভাব এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ঘাটতি না থাকার পরও পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে সেটি যেমন খতিয়ে দেখতে হবে, তেমনি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। নানাভাবেই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের জিম্মি করার অভিযোগ ওঠে, এগুলোও আমলে নিতে হবে। কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাজারে মূল্য তালিকা টানিয়ে যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কারসাজি কিংবা ইচ্ছামতো পণ্যের দাম যেন কেউ বাড়াতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিভিন্ন সময়েই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নানা ধরনের কারসাজির অভিযোগ ওঠে। এমনকি সরকার কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অথচ এটা আমলে নেওয়া সমীচীন, নিত্যপণ্যের দাম যদি চড়া হয়, তবে তা কতটা উদ্বেগের! মনে রাখা দরকার, এর আগে ক্রেতার চাপের সুযোগ নিয়ে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগও নতুন নয়। ফলে বিভিন্ন অজুহাতকে সামনে রেখে কোনো সিন্ডিকেট বা অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিকে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই বলে জানা যাচ্ছে, অন্যদিকে ১৫ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। ফলে সার্বিক বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পেঁয়াজের দামসহ নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং করতে হবে। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।