বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়; তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয় বারবারই আলোচনায় আসে। অথচ পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দেশে এখন যে কয়টি বিষয় আলোচিত, তার মধ্যে অন্যতম বাজারে লাগামহীন ডিমের দাম। তথ্য মতে, রাজধানীর বাজারগুলোতে ডিমের দামে এখন 'পাগলা ঘোড়া' ছুটছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিমের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ উৎপাদক খামারিদের কাছ থেকে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে ডিম কিনছেন পাইকাররা। ডিম উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, তারা এর চেয়েও কম দামে পাইকারদের কাছে ডিম সরবরাহ করছেন। তাহলে খুচরা পর্যায়ে একটি ডিমের দাম কী করে ১৩ থেকে ১৫ টাকা হয়?
আমরা বলতে চাই, যখন ডিম নিয়ে এমন পরিস্থিতি সামনে আসছে, তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। আমলে নেওয়া দরকার, ডিমের দাম বৃদ্ধির ঘটনাকে অস্বাভাবিক উলেস্নখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে- পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই ডিমের দাম বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই পাইকারদের কারসাজি তথা ডিমের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন।
সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিমের ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই তিন-চার দফায় হাত বদল হয়, দাম বাড়ে। পরে সকালে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য একটি দাম নির্ধারণ করে খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই দরেই সারাদেশে ডিম বিক্রি হয়। আর এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম কিনতে ভোক্তাকে তিন-পাঁচ টাকা বেশি দাম দিতে হয়- এমন অভিযোগও উঠে এসেছে। যদিও তা অস্বীকার করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আমরা মনে করি, ডিম নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। কেউ যেন ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের জিম্মি করতে না পারে সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর ১ হাজার ৮০৬ কোটি ডিমের চাহিদা থাকে। সেখানে উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৩৭ কোটি। যা চাহিদার চাইতে বেশি। ফলে বাজারে ডিমের দাম বেশি থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তারপরও কেন ডিমের দাম বাড়ছে সেটি সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করবে এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাজারে মূল্য তালিকা টাঙিয়ে যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন সময়েই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নানা ধরনের কারসাজির অভিযোগ ওঠে। এমনকি সরকার কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও সেই দামে কোথাও পণ্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অথচ এটা আমলে নেওয়া সমীচীন, নিত্যপণ্যের দাম যদি চড়া হয়, তবে তা কতটা উদ্বেগের! মনে রাখা দরকার, এর আগে ক্রেতার চাপের সুযোগ নিয়ে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগও নতুন নয়। ফলে বিভিন্ন অজুহাতকে সামনে রেখে কোনো সিন্ডিকেট বা অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চাহিদার চাইতে ডিমের উৎপাদন বেশি। ফলে বাজারে ডিমের দাম বেশি থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তারপরও যখন ডিমের দাম বাড়ছে, নানা ধরনের কারসাজির বিষয় আলোচনায় আসছে; তখন সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবং প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে ডিমের দামসহ নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।