যতই দিন যাচ্ছে দুর্ঘটনায় সারাদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃতু্য বেড়েই চলেছে উদ্বেগজনক হারে। গত ৬ মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ৪২০টি দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের একই সময়ে সারাদেশে ২৮৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৩৮৯ জন শ্রমিক। বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
জরিপে পাওয়া কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহণ খাতে, ২৫০ জন। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদু্যৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান) ৭৪ জন, কৃষি খাতে ৬৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছেন ৫২ জন এবং কলকারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৩৩। জরিপে মৃতু্যর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১০ জন (পরিবহণ খাতের ২৫০ ছাড়াও অন্যান্য খাতের শ্রমিক ও কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসার পথে দুর্ঘটনাসহ); বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫২ জন; বজ্রপাতে ৫১ জন; মাচা বা উপর থেকে পড়ে মারা গেছেন ২৩ জন। শক্ত বা ভারী বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ১৫ জন; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৮ জন; পানিতে ডুবে ৬ জন; আগুন ও বিস্ফোরণে ৩ জন; গার্ডার ধসে ১ জন এবং অন্যান্য কারণে ৬ জন নিহত হয়েছেন।
কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃতু্য বেড়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
\হকেবল দেশেই নয়, প্রায়ই অভিবাসীদের মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর চেষ্টায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় পাঁচ হাজার অভিবাসীর মৃতু্য হয়েছে- যা নজিরবিহীন। অভিবাসনবিষয়ক অধিকারগোষ্ঠী 'ওয়ার্কিং বর্ডারস'-এর বুধবারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই উলেস্নখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে'র মধ্যে মরক্কো, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল ও গাম্বিয়া থেকে ক্যানারি যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহাসাগরে ৪ হাজার ৮০৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। ৯৫ শতাংশ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃতু্যর মধ্য দিয়ে আফ্রিকা ও স্পেনের মধ্যবর্তী এই জলপথটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী রুটে পরিণত হয়েছে। স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে দ্বীপপুঞ্জে আগত অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেড়ে ১৬ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এমন মৃতু্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ থেকেও ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশির ভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান।
আমরা মনে করি, দেশে-বিদেশে এমন মৃতু্য রোধ করতে হবে। বিশেষ করে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃতু্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।