শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

আড়াই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে
  ০৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আড়াই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, সদ্যবিদায়ী জুন মাসে রেকর্ড আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে- যা ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরো সময়ে এসেছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, রেমিট্যান্সে সুখবর এলে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। কেননা, দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতিতে রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে।

তথ্য মতে, নানা উদ্যোগের ফলে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে এমন প্রত্যাশাও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের সর্বশেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এটি তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ করা দরকার, এর আগে সবশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। ওই মাসে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। সেই হিসাবে মে মাসের তুলনায় জুনে ২৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার বেশি এসেছে। আর গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি এসেছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরো সময়ে এসেছে ২৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৩৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৩১ কোটি ডলার যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

আমলে নেওয়া দরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্সে ডলারের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে ব্যাংকের দরে পার্থক্য কমে এসেছে। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স বাড়াতে অনেক চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের উৎসাহিত করছে, এতে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আগামীতেও বাড়বে বলে জানান তারা। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি যেমন পর্যবেক্ষণ জরুরি, তেমনি রেমিট্যান্স কীভাবে বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনা মাফিক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে তৎপর থাকতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রবাসী আয় দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছে। ফলে, রেমিট্যান্সে যে ইতিবাচক খবর এলো, তা ধরে রাখতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। এটাও বলা দরকার, নানা সময়ে রেমিট্যান্সে ধস নামা বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে প্রবাসী আয়ে ধস নামলে বিষয়টি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি ইতিবাচক রেমিট্যান্সের অগ্রগতি ধরে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপও গ্রহণও অপরিহার্য।

স্মর্তব্য, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়া, রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমন আলোচনা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এছাড়া, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার এবং দক্ষ জনশক্তির বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি যত বেশি পাঠানো সম্ভব হবে ততই দেশের সুনাম বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা সঙ্গত।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সদ্যবিদায়ী জুন মাসে রেকর্ড আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে- যা আমলে নিয়ে পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে, প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে